শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস): এক দশক আগে মেক্সিকোয় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৪৩ শিক্ষার্থীর গুম ও হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ল্যাম্বার্টিনা গ্যালিয়ানাকে বুধবার গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মেক্সিকো সিটি থেকে এএফপি এসংবাদ জানিয়েছে।
সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ল্যামবার্টিনা গ্যালিয়ানা নামের ওই সাবেক বিচারপতির বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুমের এর অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ওই ঘটনার সময় ধারণকৃত একটি ভিডিও গোপন করায় সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি মেক্সিকোর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দেশটিতে নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়েছে, যা এই সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরে।
গ্যালিয়ানা অবসরে যাওয়ার আগে দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়েরেরো রাজ্যের সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওই রাজ্যের আয়োৎসিনাপা গ্রামের একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের ছাত্ররা নিখোঁজ হন। আজ পর্যন্ত নিখোঁজ ছাত্রদের মধ্যে মাত্র তিনজনের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। নিহতদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
রাজনৈতিকভাবে সচেতন ওই ছাত্ররা মেক্সিকো সিটিতে এক বিক্ষোভে অংশ নিতে একটি বাসে করে যাচ্ছিল। পথে তাদের অপহরণ করা হয়।
তদন্তকারীদের ধারণা, দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় এক মাদক চক্র (কার্টেল) তাদের অপহরণ করে। তবে সেদিন আসলে ঠিক কী ঘটেছিল, তা আজও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।
২০২২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোর-এর সরকার একটি সত্য উদ্ঘাটন কমিশন গঠন করে। তারা ঘটনাটিকে একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ বলে অভিহিত করে জানান যে, মেক্সিকো সেনাবাহিনী সরাসরি অথবা অবহেলার মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িত ছিল।
কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ঘটনার সময় সেনাবাহিনী কী ঘটছে তা জানত এবং শিক্ষার্থীদের অপহরণ ও গুম হওয়ার ব্যাপারে তারা তাৎক্ষণিকভাবে অবগত ছিল।
কমিশন যে তত্ত্ব তুলে ধরে, তাতে বলা হয়—ছাত্ররা যেই বাসটি নিয়ে যাত্রা করেছিল, সেটিতে হয়তো তাদের অজান্তে লুকানো মাদক ছিল। এ কারণেই মাদক কার্টেলের নজরে পড়ে তারা। এই নির্মম ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দার ঝড় তোলে এবং পুরো মেক্সিকো জাতিকে নাড়িয়ে দেয়। ২০০৬ সাল থেকে দেশটিতে মাদক-সম্পর্কিত সহিংসতায় প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।