শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের সম্ভাবনা নিয়ে কিয়েভ ও মস্কোর প্রতিনিধিরা প্রথম সরাসরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।
ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তুরস্ক সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি আলোচনায় যোগ দেবেন না।
তীব্র কূটনীতিক চাপ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধের দ্রুত অবসানের আহ্বান সত্ত্বেও, মস্কো ও কিয়েভের দাবির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়া বার বার দক্ষিণ ও পূর্ব ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল ধরে রাখার এবং কিয়েভের কাছে আরো বেশি জমি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। ২০২২ সালে মস্কো দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ছিনিয়ে নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং তখন থেকেই এটি তাদের দখলে রেখেছে।
প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গত বছর যে কোনো শান্তি মীমাংসার পূর্বশর্ত হিসেবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলোর কিছু অংশ থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানান। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, যেকোনো আলোচনার জন্য এই অঞ্চলগুলোয় মস্কোর মালিকানার স্বীকৃতি ‘অপরিহার্য’।
তবে, জেলেনস্কি বলেন, কূটনৈতিক উপায়ই হতে পারে কিয়েভের রাশিয়া অধিকৃত কিছু অঞ্চল ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায়।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক ছাড় প্রয়োজন হবে। কিয়েভ ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে তারা কোনও শান্তি চুক্তির অংশ হিসাবে ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না।
ন্যাটোর কাছে রাশিয়ার দাবি: রাশিয়া ইউক্রেনকে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদান থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বার বার জেলেনস্কিকে তার পদ থেকে অপসারণও করতে চেয়েছে।
২০২২ সালে রাশিয়া তাদের আক্রমণ শুরু করলে জেলেনস্কিকে উৎখাত করার ইচ্ছা ছিল রাশিয়ার। পুতিন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইউক্রেনের জেনারেলদের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করার এবং তারপর মস্কোর সাথে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মার্চ মাসে পুতিন ইউক্রেনকে জাতিসংঘ-সমর্থিত ‘অস্থায়ী প্রশাসনের অধীনে আনার ধারণাটি তুলে ধরেন, মূলত জেলেনস্কিকে অপসারণের জন্য তিনি তার আহ্বানকে নতুন করে তুলে ধরেন।
যুদ্ধের সময় রাশিয়ার কর্মকর্তারা কিয়েভকে একটি নব্য-নাৎসি ‘শাসন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ইউক্রেনের ‘সামরিকীকরণ মুক্তকরণ’ ও ‘নাৎসিবাদমুক্তকরণ’ করার আহ্বান জানান। তবে কিয়েভ, পশ্চিমা বিশ্ব ও বিশেষজ্ঞরা এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে।
রাশিয়া মাঝে মাঝে ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা করতে এর সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করার চেষ্টা করেছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে বলেছে।
ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা : জেলেনস্কি কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার পুনরায় আক্রমণ বন্ধ করার জন্য ইউক্রেনের ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ দাবি জানিয়ে আসছেন।
তার প্রধান দাবি, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা, অথবা ইউক্রেনকে সামরিক জোটের পাঁচ নম্বর ধারার যৌথ প্রতিরক্ষা শর্তের আওতায় আনা। তবে ট্রাম্প ইউক্রেনকে ব্লকে যোগদানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন এবং রাশিয়া বলেছে, ন্যাটোর সদস্যপদ ‘অগ্রহণযোগ্য’ হবে।
পরিবর্তে, কিয়েভ অন্য কোনও ধরণের পশ্চিমা সামরিক প্রতিশ্রুতির জন্য চাপ দিচ্ছে যা মস্কোকে হতাশ করছে।
‘ইচ্ছুকদের জোট’ নামে পরিচিত দেশগুলোর একটি গ্রুপের মধ্যে যেকোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য সম্ভাব্য ইউরোপীয় সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। তবে জেলেনস্কি ও কিয়েভ এখনও চাইছেন ওয়াশিংটন যেকোনো ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ সমর্থন করুক।
মস্কো বলেছে যে তারা ইউক্রেনে ন্যাটো দেশগুলোর সৈন্য মোতায়েনের বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না।
যুদ্ধ বিরতি: জেলেনস্কি আকাশ, সমুদ্র ও স্থলে যুদ্ধের তাৎক্ষণিক, পূর্ণ নিঃশর্ত বিরতি চান। তিনি মার্চ মাসে মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তবে পুতিন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
পুতিন পরিবর্তে ইস্টার উপলক্ষে এবং রাশিয়ার ৯ মে বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য দুটি সংক্ষিপ্ত ‘যুদ্ধবিরতির’ নির্দেশ দেন। এই সময়ে বিমান হামলা কমলেও ইউক্রেন বার বার মস্কোর বিরুদ্ধে লঙ্ঘনের জন্য অভিযোগ করে।
সরাসরি রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার আহ্বান জানিয়ে ক্রেমলিন থেকে তার গভীর রাতের ভাষণে, পুতিন বলেছেন, তিনি পক্ষগুলোর মধ্যে যে কোনো ধরণের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি বাদ দিচ্ছেন না।