বাসস
  ১৪ মে ২০২৫, ১৩:০৫

চীন-মার্কিন বাণিজ্য উচ্ছ্বাস ম্লান হওয়ায় এশিয়ার বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তির প্রাথমিক উচ্ছ্বাস কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ায় বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে। যদিও মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিটে ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে, তবে বিনিয়োগকারীরা এশিয়ার বাজারে তেমন আশাবাদ দেখাতে পারেননি। হংকং থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত এপ্রিল মাসে দেখা দেওয়া প্রবল অস্থিরতা কিছুটা কমলেও ওয়াশিংটনকে এখনো অনেক দেশের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে যাতে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।

মার্কিন মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। তবে, মে মাসের অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা করা ‘লিবারেশন ডে’ শুল্কগুলোর প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে বোঝা যাবে ।

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী চুক্তি হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—এই চুক্তির মাধ্যমে চীন এখন মার্কিন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।’ মঙ্গলবার এয়ার ফোর্স ওয়নে বসে উপসাগরীয় দেশগুলো সফরে যাচ্ছিলেন তখন এই মন্তব্য করেন তিনি। এই সফরের সময় সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়।

এই বিনিয়োগের মধ্যে মার্কিন চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া ও অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেসের (এএমডি) সঙ্গে বড় চুক্তিও রয়েছে। যা দেশটির কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প বলেন, এসব চুক্তি ‘বিনিয়োগ ও চাকরির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতিসাধন করবে। স্টক মার্কেট অনেক উপরে উঠবে।

মার্কিন প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যা ইতিবাচক মূল্যস্ফীতির তথ্য দ্বারা আংশিকভাবে সহায়তা পেয়েছে। তবে এশিয়ার বাজারগুলো এই ধারা ধরে রাখতে পারেনি।

হংকং, সিউল, জাকার্তা ও তাইপে ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে, অন্যদিকে ওয়েলিংটন ও ম্যানিলায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। টোকিও, সাংহাই, সিডনি ও সিঙ্গাপুরের সূচক নিম্নমুখী হয়েছে।

গত চারদিন ধরে তেলের দাম বাড়লেও বুধবার তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, কারণ, ইরান সংক্রান্ত পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ ও চাহিদা বৃদ্ধির আশাবাদ কমে এসেছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি বাজারে স্বস্তি দিলেও, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য অচলাবস্থা নিরসনে মার্কিন নেতৃত্বের করণীয় এখনো অনেক। অনেক দেশ মার্কিন শুল্ক এড়াতে দ্রুত চুক্তি করতে চাইছে।

স্যাক্সো মার্কেটসের বিশ্লেষক নিল উইলসন বলেন, ‘এই পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতি হলেও এটি শান্তিচুক্তি নয়—বর্তমান শুল্ক হার আগের চেয়েও কঠোর রয়েছে।’ 

এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেন, ‘বাজার এই চিত্র খুব ভালোভাবেই চেনে,  ট্রাম্প উত্তেজনা তৈরি করেন, বাজার পড়ে যায়, তারপর গোপন আলোচনায় সমঝোতা হয়, চীন নমনীয়তা দেখায়, চুক্তি হয়, ঝুঁকি গ্রহণের আগ্রহ বাড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আপাতত কুয়াশা কেটে গেছে। তবে এই চক্র স্থায়ী উন্নতি আনবে, না আবার নতুন অস্থিরতা তৈরি করবে—তা সময়ই বলে দেবে।’

এদিকে, মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান পূর্বাভাস দিয়েছে, চীনের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চলতি বছর প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। আগে তারা শুল্কজনিত কারণে সংকোচনের আশঙ্কা করেছিল।

বিনিয়োগকারীরা এখন চীনের প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবা ও টেনসেন্টের আয় প্রতিবেদন প্রকাশের অপেক্ষায় আছেন, যা দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র স্পষ্ট করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।