শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : গাজায় ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদকে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সেখানে গণহত্যা প্রতিরোধ করা যায়।
তিনি বলেন, 'যারা নিহত হয়েছে, যাদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেছে—তাদের হয়ে বলছি: আর কত প্রমাণ চাই আপনাদের? গণহত্যা রোধ করতে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে আপনারা কি এখনই পদক্ষেপ নেবেন না?'
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে এএফপি জানাশ, ফ্লেচার অভিযোগ করেন, ইসরাইল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নির্লজ্জভাবে’ দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বেসামরিক জনগণের ওপর অমানবিক পরিস্থিতি চাপিয়ে দিচ্ছে।
তিনি জানান, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সীমান্তে ‘জীবনরক্ষাকারী ত্রাণসামগ্রী’ প্রস্তুত রেখেছে, কিন্তু সেগুলো প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি ইসরাইলি শর্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, 'এই প্রক্রিয়া একপ্রকার প্রতারণা—ক্ষুধাকে একটি দরকষাকষির উপাদানে পরিণত করা হয়েছে।'
ফ্লেচার বলেন, ইসরাইলের নতুন প্রস্তাব বাস্তবে এমন সব শ্রেণির মানুষকে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করছে—যেমন প্রতিবন্ধী, নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও আহত ব্যক্তিরা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ ইউরোপীয় সদস্য—ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্লোভেনিয়া, গ্রিস ও ডেনমার্ক—এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলি পরিকল্পনা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে বলেন, :মানবিক সহায়তা কখনও রাজনৈতিক হাতিয়ার বা সামরিক কৌশল হতে পারে না।'
এদিকে, জাতিসংঘে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এসব অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন ও অশোভন' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
টম ফ্লেচার বলেন, 'আমরা প্রতিদিন যা প্রত্যক্ষ করছি তা বিশদভাবে এই পরিষদে জানিয়েছি—মৃত্যু, আঘাত, ধ্বংস, অনাহার, রোগ, নির্যাতন, অন্য নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ, ব্যাপক হারে বাস্তুহারা হওয়া। আমরা তুলে ধরেছি কীভাবে ত্রাণ সরবরাহে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনি জীবনের কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত যখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে, তখন 'অনেক দেরি হয়ে যাবে।'
ফ্লেচার বলেন, 'আমি আপনাদের বলতে পারি, গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা ঘুরে দেখে জেনেছি—এই মাত্রার মৃত্যুর একটা গন্ধ আছে, একটা শব্দ আছে, যা হৃদয় বিদীর্ণ করে।'
'একজন নার্স আমাকে বলেছেন: 'আমরা যখন শিশুদের শরীর থেকে পোড়া কাপড় ছাড়িয়ে নিই, তখন তারা কাঁদে, আর্তনাদ করে।’
মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজায় একটি হাসপাতালের কাছে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে উদ্ধারকর্মীরা।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও জানিয়েছেন, তারা শিগগিরই গাজায় ‘সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে’ প্রবেশ করবে। এর আগে দুই মাসের একটি যুদ্ধবিরতির পর দেশটি আবার অভিযান শুরু করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের এক আক্রমণে ইসরাইলে ১,২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এর জবাবে ইসরাইল চালায় বিধ্বংসী সামরিক অভিযান, যাতে এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৫২,৯০৮ জন নিহত হয়েছে—এদেরও অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ—হামাস-শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যা জাতিসংঘও নির্ভরযোগ্য মনে করে।
বিভিন্ন নাগরিক স্থাপনায় হামলা চালানো, যেমন সড়ক, স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে ইসরাইল দাবি করেছে, এসব স্থানে হামাস লুকিয়ে আছে।
ফ্লেচার বলেন, 'যদি আমরা সত্যিই আমাদের সর্বোচ্চটা না করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের এই কক্ষেই বিচার করবে। আর আমাদের সেই বিচারের ভয় পাওয়া উচিত।'