বাসস
  ১৪ মে ২০২৫, ১২:২০

সাজা কমল মেনেন্দেজ ভ্রাতৃদ্বয়ের, প্যারোলে মুক্তির সুযোগ

ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাবা-মাকে শটগান দিয়ে হত্যা করে তিন দশকের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা লাইল ও এরিক মেনেন্দেজ এখন মুক্তি পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসের এক বিচারক তাদের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে প্যারোলের সুযোগ রেখে নতুন সাজা ঘোষণা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে এএফপি জানায়, ১৯৮৯ সালে বেভারলি হিলসের নিজ বাড়িতে বাবা হোসে ও মা কিটি মেনেনদেজকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেন এই দুই ভাই। মামলার শুনানিতে তারা খুনের দায় স্বীকার করে বলেন, ওই দিনের সমস্ত সিদ্ধান্ত ছিল তাদের নিজেদের নেওয়া।

বিচারক মাইকেল জেসিক বলেন, ‘গত ৩৫ বছরে তারা যেভাবে সময় কাটিয়েছেন, তাতে আমি মনে করি, তাদের একবার সুযোগ পাওয়া উচিত।’

আগের ‘প্যারোলের কোনো সুযোগ ছাড়া যাবজ্জীবন’ সাজার বদলে এখন তাদের নতুন সাজা হলো—‘৫০ বছর থেকে যাবজ্জীবন’। ফলে তারা এখনই প্যারোলের আবেদন করতে পারবেন। আগামী মাসেই শুনানি হবে।

সাজা হ্রাসের দাবিতে তারা গত দুই বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের এই প্রচারণায় জনমত গঠনেও সহায়তা করেছে কিম কারদাশিয়ানের মতো সেলিব্রিটি এবং নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় মিনি-সিরিজ ‘মনস্টারস: দ্য লাইল অ্যান্ড এরিক মেনেন্দেজ স্টোরি’।

৯০-এর দশকে আলোড়ন তোলা মামলায় আদালত শুনেছিল, কীভাবে দুই ভাই প্রথমে ঘটনার  সময় অনুপস্থিত থাকার নাটক সাজিয়ে খুন ঢাকার চেষ্টা করেন। পরে হোসে মেনেন্দেজকে পাঁচবার গুলি করেন, এমনকি হাঁটুতেও গুলি করেন। কিটি মেনেন্দেজ পালানোর চেষ্টা করলে তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।

প্রথমে তারা বলেছিলেন, এটি মাফিয়াদের হামলা। পরে বারবার তাদের বক্তব্য পাল্টান। শেষ পর্যন্ত এরিক, যিনি তখন ১৮ বছর বয়সী, তার থেরাপিস্টের কাছে খুনের কথা স্বীকার করেন।

পরবর্তীতে তারা দাবি করেন, বাবা হোসে তাদের ওপর বছরের পর বছর ধরে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন, আর সেই নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় আত্মরক্ষার জন্যই তারা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন।

কারাগারে থাকাকালীন যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত সচেতনতা ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তনের কারণে তাদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখছে অনেকেই। টেলিভিশন, তথ্যচিত্র ও সিরিজের মাধ্যমে তাদের জীবনের কাহিনি নানা সময় তুলে ধরা হয়েছে।

‘পুরো দায় আমার’ -

মঙ্গলবার আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫৭ বছর বয়সী লাইল মেনেন্দেজ বলেন, ‘আমি যা করেছি, তার পুরো দায় আমার। আমি বন্দুক তাক করেছি, রিলোড করেছি, পালিয়েছি, লুকিয়েছি—সবকিছুই আমার সিদ্ধান্ত।’

৫৪ বছর বয়সী এরিক মেনেন্দেজ বলেন, ‘আমি আইনের হাতে বিচার ছেড়ে না দিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম—এটা ভুল ছিল। আমি নিষ্ঠুর আর কাপুরুষোচিত আচরণ করেছি।’

‘আমি পাঁচবার গুলি চালিয়েছিলাম, তারপর আবার গুলি আনতে গিয়েছিলাম। পুলিশ ও আত্মীয়দের কাছে মিথ্যা বলেছিলাম। আমি সত্যিই দুঃখিত।’

কারাগারে তারা নানা সমাজসেবামূলক কাজে, বিশেষ করে মৃত্যুপথযাত্রী বন্দীদের সেবায়যুক্ত ছিলেন। তাদের পরিবারও আদালতে তাদের পক্ষেই কথা বলেছেন।

চাচাতো বোন আনামারিয়া বারাল্ট আদালতে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি ৩৫ বছর যথেষ্ট। আমরা পরিবার হিসেবে তাদের ক্ষমা করেছি। তাদের দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ প্রাপ্য।’

কিটি মেনেন্দেজের ভাতিজি ডায়ান হার্নান্দেজ বলেন, ‘তারা এখন সত্যিই বদলে গেছেন। তারা আর কখনও আইনের বিরুদ্ধে যাবেন না। তাদের একমাত্র চাওয়া হলো—ভালো কিছু করা।’

তবে লস অ্যাঞ্জেলেসের জেলা অ্যাটর্নি নাথান হকম্যান এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘তারা অন্তত পাঁচবার খুনের কারণ পাল্টেছেন। পুরো সত্য স্বীকার না করা পর্যন্ত তাদের মুক্তি পাওয়া উচিত নয়।’

ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী, কারও প্যারোল মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত দিলে গভর্নর গ্যাভিন নিউসম সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে, পরিবর্তন করতে বা বাতিল করতে পারেন।