বাসস
  ১৪ মে ২০২৫, ১১:৪৮

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিতে মধ্য ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি চাপের মুখে: ইউরোপীয় উন্নয়ন ব্যাংক

ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাবে চলতি বছর মধ্য ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাপের মুখে পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউরোপীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ইবিআরডি)।

লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, লন্ডনভিত্তিক ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক মঙ্গলবার জানায়, জার্মানির বিপর্যস্ত অর্থনীতির ওপর উচ্চ মাত্রায় নির্ভরশীল হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিক্রিয়া ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে ব্যাংকটি অঞ্চলটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করেছে।

গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ১০ শতাংশ ‘বেসলাইন’ শুল্ক আরোপ করে। সেই সঙ্গে গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আলাদা করে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসায়।

ইবিআরডির প্রধান অর্থনীতিবিদ বিআটা জাভর্চিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনে খুব কম দেশই প্রভাবের বাইরে রয়েছে।’

তার মতে, ইবিআরডি-অধিভুক্ত অঞ্চলগুলোর ওপর ‘জার্মান বাজারের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে’ এর প্রধান প্রভাব পড়ছে।

ব্যাংকের তথ্যানুসারে, যেসব দেশে তারা কাজ করছে, সেগুলোর সম্মিলিত অর্থনীতি চলতি বছরে ৩.০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ফেব্রুয়ারির পূর্বাভাস থেকে কিছুটা কম।

জার্মানি ২০২৫ সালের শুরুতে দুই বছরের মন্দা কাটিয়ে সামান্য প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিলেও, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে ইউরোপের বৃহত্তম এই অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এর ফলে জার্মান শিল্প খাত এবং রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল মধ্য ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলের দেশগুলোও প্রভাবিত হচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে, চেক প্রজাতন্ত্রের মোট দেশজ উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ জার্মানিতে রপ্তানির মাধ্যমে আসে। উত্তর মেসিডোনিয়ার ক্ষেত্রে এই হার ২০ শতাংশ। স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং কিছুটা কম হারে পোল্যান্ড ও স্লোভেনিয়াও একই চিত্রে পড়ে।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ইবিআরডি অঞ্চলগুলোর প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকেও দুর্বল করে তুলেছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সোমবারের নতুন শুল্ক হ্রাস চুক্তি এবং এর আগের সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তিকে ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন জাভর্চিক।

তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের আশাবাদী করে তুলছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও একটি সমঝোতা হতে পারে, যা ইইউর প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে উন্নত করবে।’

‘আর তা আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত অঞ্চলগুলোতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে,’ যোগ করেন তিনি।

১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলোকে মুক্তবাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের সহায়তা করতে ইবিআরডি গঠিত হয়। পরবর্তীতে ব্যাংকটি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায়ও কার্যক্রম বিস্তৃত করে।

ইবিআরডির এই অর্থনৈতিক হালনাগাদ তাদের বার্ষিক সম্মেলনের শুরুতেই প্রকাশিত হলো। সম্মেলনটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লন্ডনে চলবে এবং এতে আগামী পাঁচ বছরের কৌশলগত ও পুঁজিগত কাঠামো অনুমোদনের কথা রয়েছে।

এছাড়া, সাব-সাহারান আফ্রিকায় ব্যাংকটির কার্যক্রম সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বেনিন, আইভরি কোস্ট এবং নাইজেরিয়াকে নতুন কার্যক্রমভুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করার কথাও রয়েছে।