শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব আগমন উপলক্ষে মঙ্গলবার দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ উপলক্ষে ট্রাম্পের জন্য সৌদি আরব আয়োজন করেছে রাজকীয় অভ্যর্থনার।
রিয়াদ থেকে এএফপি জানায়, এয়ার ফোর্স ওয়ান যখন সৌদি আকাশসীমায় প্রবেশ করলে সৌদি যুদ্ধবিমান তাকে অভ্যর্থনা জানায় । এরপর সম্মান প্রদর্শনকারী গার্ড ও পতাকাবাহী অশ্বারোহীরা ট্রাম্পের মোটর বহরকে প্রাসাদ পর্যন্ত নিয়ে যায়।
প্রাসাদের বিশাল ঝাড়বাতির নিচে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে ট্রাম্প তা স্বাগত জানান এবং রসিকতা করে বলেন, এটি যেন এক ট্রিলিয়ন হয়।
ট্রাম্প বলেন, 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক নেতারা আজ এখানে আছেন, এবং তারা অনেক চেক নিয়ে ফিরবেন।' তিনি দাবি করেন, 'এই চুক্তিগুলোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।'
হোয়াইট হাউস জানায়, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনবে—যাকে তারা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র চুক্তি বলে অভিহিত করেছে। যদিও প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প আরও বড় অঙ্কের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির দাবি করেছিলেন।
এছাড়া, সৌদি কোম্পানি ডেটাভোল্ট যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্থাপনায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও উভয় দেশে বিনিয়োগ করবে—যা সৌদির জন্য ইতিবাচক, কারণ দীর্ঘদিন ধরে দেশটি মার্কিন উচ্চপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মুখে ছিল।
সৌদি রাজপরিবার ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্বদের দীর্ঘ সারি ট্রাম্প ও যুবরাজের সঙ্গে হাত মেলাতে অপেক্ষা করে, এর মধ্যে ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ইলন মাস্ক।
ট্রাম্প এরপর কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন—এই তেলসমৃদ্ধ রাজতন্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, পাশাপাশি ট্রাম্পেরও ঘনিষ্ঠ।
তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় সফরের জন্য উপসাগরীয় অঞ্চলকে বেছে নেওয়া—যা তিনি আট বছর আগেও করেছিলেন—এতে স্পষ্ট যে পশ্চিমা মিত্রদের তিনি আবারও পাশ কাটাচ্ছেন, যারা তাঁর ধাঁচবিরুদ্ধ কূটনীতিতে কিছুটা উদ্বিগ্ন।
২০১৭ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও তিনি সৌদি আরবেই প্রথম বিদেশ সফর করেন, যেখানে তিনি আলো ছড়ানো গোলক স্পর্শ করেন এবং তরবারি নৃত্যে অংশ নেন।
সৌদির ভাবমূর্তি পাল্টানোর চেষ্টা -
সৌদি আরবের প্রতি ট্রাম্পের উষ্ণতা দৃশ্যত বাইডেনের প্রথম দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে ভিন্ন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার দায়ে যুবরাজকে ‘শাস্তি দেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
যুবরাজের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে ট্রাম্প বলেন, 'আমি তখনই এই তরুণকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম—তিনি বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিপক্ব।'
খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সৌদি আরব নারীদের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল ও তেলনির্ভরতা কমিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো খাতে বৈচিত্র আনতে কাজ করছে। পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে—যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন-রাশিয়া সংলাপের স্থান হিসেবে সৌদি ভূমিকা রাখছে।
কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট। কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের সঙ্গে মিলে ইসরাইল-হামাস সংঘাতে মধ্যস্থতা করছে।
কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের (সিএসআইএস) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জন অল্টারম্যান বলেন, 'গালফ অঞ্চলই ট্রাম্পের প্রিয় জায়গা। এখানকার নেতারা তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেবেন, কোনো সমালোচনা করবেন না এবং তাঁর পরিবারকেও বর্তমান ও ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করবেন।'
বিলাসবহুল উড়োজাহাজ উপহার -
ট্রাম্পের জন্য বিলাসবহুল বোয়িং উড়োজাহাজ উপহার দিচ্ছে কাতার, যা তিনি এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে রূপান্তর করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে নিজের কাছে রাখতে পারবেন।
ট্রাম্পের ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বীরা একে ‘প্রকাশ্য দুর্নীতি’ বলে আখ্যা দিলেও ট্রাম্প বলেছেন, এই চুক্তি 'খুবই প্রকাশ্য ও স্বচ্ছ।'
সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অর্জন হিসেবে ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়ের লক্ষ্য সৌদি আরবকে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে রাজি করানো। তবে রিয়াদ জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না।
ইসরাইল দুই মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় সব ধরনের খাদ্য ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে এবং হামাসের বিরুদ্ধে নতুন অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র ইসরাইল নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ না করলেও গোপনে বিরক্ত। সম্প্রতি মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে মুক্ত করতে হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে ওয়াশিংটন। ট্রাম্প এদিন ফোনে ওই মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির সঙ্গে কথা বলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ও তেহরানের মধ্যে চার দফা পারমাণবিক আলোচনা হয়েছে—এ প্রেক্ষাপটে ইরান ইস্যুটিও এই উপসাগর সফরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে।