বাসস
  ১৪ মে ২০২৫, ১০:৩৫

ক্যান্সার গবেষণায় ৩১ শতাংশ বাজেট কাটছাঁট করেছে ট্রাম্প প্রশাসন : সিনেট প্রতিবেদন

ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ক্যানসার গবেষণার বাজেট ৩১ শতাংশ কমিয়েছে বলে মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি সিনেট প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এতে হোয়াইট হাউসকে ‘বিজ্ঞানবিরোধী যুদ্ধ’ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, বামপন্থী সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের অনুরোধে তৈরি করা এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাস পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৬৬০টি অনুদান বাতিলসহ স্বাস্থ্য খাতে অন্তত ১৩.৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বন্ধ করা হয়েছে এবং হাজার হাজার বিজ্ঞানী ও কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। 

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট, যার বাজেট জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি কমে গেছে, যার ফলে প্রকৃত অনুদান গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। এর মূল প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (ঘওঐ)-এর বাজেট থেকে কাটা হয়েছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার।

সেনেটের হেলথ, এডুকেশন, লেবার অ্যান্ড পেনশনস (হেল্প) কমিটির র‌্যাংকিং সদস্য বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, 'জানুয়ারি থেকে ট্রাম্প বিজ্ঞানের ও বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন, বেআইনি এবং নিন্দনীয় হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কেবল বৈজ্ঞানিক সত্য অস্বীকার করছেন না, বরং এটিকে ধ্বংস করতেও সচেষ্ট।'

ডজনখানেক ফেডারেল বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যকর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রস্তুত প্রতিবেদনটিতে স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ বিভাগের (এইচএইচএস) ভিতরে ‘সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার’ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে টিকা-বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের নেতৃত্বে চলছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) কমপক্ষে ১৭৫টি জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত ডেটাসেট মুছে ফেলেছে। এক চিকিৎসক বলেন, 'এর ফলে ডাক্তাররা কীভাবে রোগীকে চিকিৎসা দেবেন, সে বিষয়ে যাচাই করা দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।'

৪৩ বছর বয়সী এক কোলোরেক্টাল ক্যানসার রোগী, যিনি ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন ও ৪৮ রাউন্ড কেমোথেরাপি নিয়েছেন, জানান যে এনআইএইচের টি-সেল থেরাপি পরীক্ষামূলক চিকিৎসায় তার অংশগ্রহণ কর্মী সংকটে বিলম্বিত হয়েছে।

তিনি বলেন, 'বাস্তবতা হলো, অর্থ ও কর্মী কমিয়ে দিয়ে এনআইএইচ আমার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারবে না—এবং এতে আমার জীবন হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।'

এনআইএইচ ক্লিনিক্যাল সেন্টারের গবেষকেরা জানান, পুরো ল্যাব ছাঁটাইয়ের পর সেখানে ‘সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা’ তৈরি হয়েছে। এক গবেষক বলেন, 'এই প্রশাসনের হাতে বহু মানুষের রক্ত লেগে আছে। আমরা শুধু মানুষদের চিকিৎসা দিতে চাই।'

প্রতিবেদনটিতে আরও সতর্ক করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে চলমান হামের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ভুল তথ্য প্রচারের মারাত্মক পরিণতি নিয়ে। ইতোমধ্যে এই রোগে ১,০০০ জনের বেশি আক্রান্ত এবং তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। টিকা-সংক্রান্ত অনীহা নিয়ে হওয়া ৪০টিরও বেশি গবেষণা অনুদান বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র নিয়োগ দিয়েছেন টিকা-বিরোধী ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক ডেভিড গাইয়ারকে, যিনি লাইসেন্সবিহীন চিকিৎসা অনুশীলনের দায়ে শাস্তি পেয়েছেন এবং অটিস্টিক শিশুদের ওপর পরীক্ষামূলক ও অপ্রমাণিত ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে টিকার সঙ্গে অটিজমের ‘সম্পর্ক’ খতিয়ে দেখার কাজে—যা ইতোমধ্যে বহু গবেষণায় অসত্য প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যেই ট্রাম্প আগামী বছর স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ বিভাগের বাজেট থেকে আরও ২৬ শতাংশ ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে একই সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছেন কেনেডির ‘মেইক আমেরিকা হেলদি অ্যাগেইন’ কর্মসূচির জন্য, যার লক্ষ্য পুষ্টি, শারীরিক ব্যায়াম এবং ওষুধনির্ভরতা হ্রাস।

এএফপি জানিয়েছে, প্রতিবেদনটির বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হয়েছে।