শিরোনাম
ঢাকা, ১২ মে, ২০২৫ (বাসস) : গাজায় আটক এক মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। একইসঙ্গে জানায়, যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছেন।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি জানায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিক ২১ বছর বয়সী ইডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা এবং মানবিক ও ত্রাণ সহায়তার দ্বার ফের খুলবে এমন প্রত্যাশায় এ ঘোষণা দিয়েছেন তারা।’
ইসরাইলি সেনা আলেকজান্ডারের পরিবার জানায়, তাদের জানা হয়েছে, "আগামী কিছু দিনের মধ্যে" মুক্তি পেতে পারেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে একে "ঐতিহাসিক খবর" বলে আখ্যা দেন। এটি "সৎ প্রচেষ্টার লক্ষণ" বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্প আরো বলেন, "আশা করি, নির্মম যুদ্ধ অবসানে এটিই প্রয়োজনীয় ও চূড়ান্ত পদক্ষেপগুলোর শুরু।"
জিম্মি মুক্তির ঘোষণাকে "সদিচ্ছার প্রকাশ ও আলোচনায় ফেরার ইতিবাচক পদক্ষেপ" বলে যৌথ বিবৃতিতে অভিহিত করেছে হামাস-ইসরায়েল আলোচনার মধ্যস্থতাকারি যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার।
এর আগে, ‘হামাসের দুই কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং বিশেষ করে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ ও বন্দিমুক্তি বিনিময় বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, "যুদ্ধবিরতি নিয়েও অগ্রগতি হয়েছে।
তবে এসব আলোচনার মধ্যেও ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, “যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গোলাগুলির মধ্যেই আলোচনা চলবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা চালিয়ে ৫৮ ইসরালিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। তেল আবিবের অভিযোগ, এর মধ্যে ৩৪ জনকে ইতোমধ্যে মেরে ফেলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো এ বছরের মার্চে হামাসের সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগাযোগ শুরু করে। এর আগে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে একাধিক পরোক্ষ আলোচনা হলেও যুদ্ধ থামেনি।
রোববার বিবৃতিতে হামাস জানায়, তারা "অবিলম্বে একটি যুদ্ধ শেষের চুক্তির লক্ষ্যে নিবিড় আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত"। সেই সঙ্গে গাজায় একটি স্বাধীন ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন গঠনে আগ্রহী।
এতে আরো বলা হয়, "এটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে, পাশাপাশি পুনর্গঠন ও অবরোধের অবসান ঘটাবে।" তবে এর আগে, গত ১৮ এপ্রিল ইসরাইলের দেওয়া ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হামাস।
এরই মধ্যে গাজায় অভিযান আরো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে তেল আবিব। ওই এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতির কথাও বলা হয়েছে সেখানে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও, গাজায় সহিংসতা থেমে নেই। গাজার খান ইউনুস শহরে তিনটি উদ্বাস্তু তাবু লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। সেখান শিশু ও নারীদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল। অপর একটি হামলায় খান ইউনুসে তিনজন ও গাজা সিটিতে একজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, শনিবার থেকে গাজা জুড়ে ৫০টিরও বেশি হামলার চালানোর কথা স্বীকার করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সা’আর জানিয়েছেন, তিনি গাজায় সহায়তা প্রবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে “সম্পূর্ণ সমর্থন” করছেন। তবে, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) বলেছে, “তাদের গাজার বিকল্প ভাবার সুযোগ নেই।”
দু’মাসের যুদ্ধবিরতি শেষে গত ১৮ মার্চ গাজায় ফের পূর্ণাঙ্গ অভিযান শুরু করে ইসরাইল। পাশপাশি মানবিক ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। মার্চ থেকে এ পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২,৭২০ জন।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস ইসরাইলে হামলা চালালে ১,২১৮ জন নিহত হন। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এরপরই ইসরাইল পাল্টা হামলা শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২,৮১০ জনে।