বাসস
  ০৯ মে ২০২৫, ১১:২২

মার্কিন আকাশপথে যুগান্তকারী পরিবর্তনের ঘোষণা

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৯ মে, ২০২৫ (বাসস): ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো ও জর্জরিত হয়ে পড়া আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) আধুনিকায়নের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চলতি বছর ঘটে যাওয়া একটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ও শিল্প খাতের সমর্থনে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি এই প্রকল্পকে ‘প্রজন্মের একবারই আসে এমন একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা’ বলে উল্লেখ করেন। এর আওতায় কিছু নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার পুনর্নির্মাণ করা হবে এবং বর্তমানে ব্যবহৃত পুরোনো রাডার, সেন্সর ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম বদলে বসানো হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।

ডাফি একটি টেবিলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই ১৯৮০-এর দশকের কম্পিউটার, ফ্লপি ডিস্ক আর যন্ত্রপাতি—আমাদের এগুলো আর সংরক্ষণের দরকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেন একটা পুরোপুরি নতুন গাড়ি বানাচ্ছি। এটা হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যবস্থা।’

টেলিফোনে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন, এই আধুনিকায়ন আমেরিকাকে আকাশপথ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের শীর্ষস্থানে নিয়ে যাবে।

তবে এই রূপান্তর সাধনে প্রয়োজন হতে পারে কয়েক বিলিয়ন ডলার, যার জন্য কংগ্রেসের সমর্থন দরকার। বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন বড় অঙ্কের করছাড় দিতে গিয়ে ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিচ্ছে।

ঘোষণার সময় প্রকল্পের মোট ব্যয় জানানো হয়নি। গত ১৫ বছর ধরে এই খাতে বার্ষিক গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। তবে পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনই জরুরি ভিত্তিতে বাড়তি অর্থ ঢালতে হবে।

ডাফি বলেন, তিনি চাচ্ছেন কংগ্রেস যেন শুরুতেই পুরো অর্থ দিয়ে দেয়, যাতে প্রকল্পটি তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পরিবহন কমিটি ইতোমধ্যে ১২.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যা এখন কংগ্রেসের পরবর্তী ধাপ পার করছে।

অন্যদিকে, ৫০টিরও বেশি বিমান সংস্থার জোট ‘মডার্ন স্কাইস কোয়ালিশন’ জানিয়েছে, এক বছরের মধ্যেই আরও অন্তত ১৮.৫ বিলিয়ন ডলারের জরুরি ব্যয় প্রয়োজন, যা প্রকল্পের মোট ব্যয়কে ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে তুলবে।

তাদের মতে, জাতীয় আকাশসীমা ব্যবস্থায় জনবল ও প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো একদিনে সৃষ্টি হয়নি।

নিউয়ার্ক দুর্ঘটনা: সতর্ক সংকেত

ঘোষণার অনুষ্ঠানে জানুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসের কাছে একটি যাত্রীবাহী বিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করা হয়। এটি ২০০৯ সালের পর প্রথম বড় বিমান দুর্ঘটনা।

এছাড়াও ২৮ এপ্রিল নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি ঘটনাও এই প্রকল্পের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ওই দিন পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় থাকা নিয়ন্ত্রকরা ৯০ সেকেন্ড ধরে বিমানগুলোকে রাডার বা রেডিওতে ধরতে পারেননি।

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) নিউয়ার্কে আগমন ও প্রস্থান সংখ্যা সীমিত করেছে। এতে নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্ব ঘটে।

ডাফি বলেন, ‘এই ব্যবস্থা ঠিক না করলে শিগগিরই অন্য শহরেও নিউয়ার্কের মতো পরিস্থিতি দেখা যাবে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ডের (এনটিএসবি) প্রধান জেনিফার হোমেন্ডি। তিনি জানান, ৩০ বছর ধরে এই ব্যবস্থার আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হলেও তা উপেক্ষিত থেকে গেছে।

তিনি বলেন, ‘এটা সাহসী উদ্যোগ, কিন্তু আমাদের আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একেবারে অপরিহার্য।’

যুক্তরাষ্ট্রের যাত্রী ও মালবাহী বিমান সংস্থাগুলোর সংগঠন ‘এয়ারলাইন্স ফর আমেরিকা’র প্রেসিডেন্ট নিক ক্যালিও বলেন, ‘এই সুযোগ জীবনে একবারই আসে—এবার সময় এসেছে আমাদের আকাশসীমার অবক্ষয় থামিয়ে কিছু বাস্তব কাজ করার।’

রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা

ঘোষণার আগে ডাফি তার পূর্বসূরি পিট বুটিগিগকে দোষারোপ করে আসছিলেন। তবে বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে তিনি সর্বদলীয় সহযোগিতার মনোভাব দেখান। তিনি ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রিক লারসেনকে স্বাগত জানান। লারসেন বলেন, ‘এই প্রয়াস বহু প্রশাসন ধরে চলেছে, আমরা চাই না এটা প্রজন্ম ধরে চলুক।’