বাসস
  ০৯ মে ২০২৫, ০৯:০৫

চতুর্দশ লিও নাম নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পোপ প্রেভোস্ট

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন  'চতুর্দশ লিও’ নামটি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কার্ডিনালদের গোপন ভোটে তিনি বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন।

ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি জানায়, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার মানুষের সামনে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসিমুখে দুই হাতে হাত নাড়িয়ে ও নত মস্তকে সম্মান জানিয়ে নতুন পোপ বলেন,  'শান্তি আপনাদের সঙ্গী হোক।’

সিক্সটিন চ্যাপেল থেকে সাদা ধোঁয়া বের হলে নির্বাচনের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়। এটি ছিল কার্ডিনালদের ভোটের দ্বিতীয় দিন। রোমজুড়ে গির্জার ঘণ্টা বেজে ওঠে তখন। সেই মুহূর্তে হাজারো মানুষ বাসিলিকার সামনে ভিড় করে—যেখানে নতুন পোপের প্রথম ভাষণের জন্য লাল পর্দা টাঙানো ছিল।

আর্জেন্টিনার সংস্কারপন্থী পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হিসেবে প্রেভোস্টের নাম ঘোষণা করা হয় লাতিন ভাষায়।

উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট থেকে আসা ৩৯ বছর বয়সী শেফ জোসেফ ব্রায়ান বলেন, ‘এটা এক অসাধারণ অনুভূতি।’ তাঁর কথায়, ‘আমি খুব একটা ধর্মভীরু মানুষ নই, কিন্তু এখানে এত মানুষ একসাথে—এটা অবাক করে দিয়েছে আমাকে।’

এক ব্রাজিলীয় পতাকা হাতে এক যাজক কারো কাঁধে উঠে উল্লাস প্রকাশ করেন, আরেকজন আকাশের দিকে একটি ভারী ক্রুশ তুলে ধরেন বিজয়ের আনন্দে।

‘হাবেমুস পাপাম’—আমাদের পোপ এসেছেন

‘হাবেমুস পাপাম, উউউউ!’ চিৎকার করেন ৪১ বছর বয়সী ব্রাজিলীয় নারী ব্রুনা হোদারা। তিনি নিজের ফোনে সেই মুহূর্ত ধারণ করেন, চারপাশে মানুষ চিৎকার করে ওঠে—‘ভিভা ইল পাপা!’—‘পোপ দীর্ঘজীবী হোন!’ বলে।

জার্মানির মিউনিখ থেকে আসা ১৫ বছর বয়সী ফ্লোরিয়ান ফ্রিড বলেন, ‘এটা এক জীবনে একবারই দেখা যায়... আমি খুবই উচ্ছ্বসিত!’

গত মাসে ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন পোপ ফ্রান্সিস, যিনি বারো বছরব্যাপী তাঁর পন্টিফিকালে করুণা ও সংস্কারের প্রতীক হয়েছিলেন। তবে তাঁর উদার অবস্থানের কারণে অনেক রক্ষণশীলের বিরাগও কুড়িয়েছিলেন।

নতুন পোপের সামনে এখন এক বিশাল দায়িত্ব—বিশ্বব্যাপী সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নৈতিক নেতৃত্ব প্রদান, বিভক্ত চার্চকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং যৌন নিপীড়ন কেলেঙ্কারির মতো জ্বলন্ত ইস্যু মোকাবিলা।

রোমান সুরক্ষা ও ঐতিহ্য

পাঁচটি মহাদেশের ১৩৩ জন কার্ডিনাল—যারা পোপ নির্বাচনের জন্য নির্জনে গোপন কনক্লেভে অংশ নেন—বুধবার দুপুরে ভোটদান শুরু করেন। এই নির্বাচন ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে আন্তর্জাতিক। নির্বাচনের অগ্রগতি জানাতে তাঁরা শুধু সিক্সটিন চ্যাপেলের চিমনি দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ার পদ্ধতিই ব্যবহার করেন—কালো ধোঁয়া মানে সিদ্ধান্ত হয়নি, সাদা মানে নতুন পোপ নির্বাচিত।

বুধবার সন্ধ্যা ও বৃহস্পতিবার দুপুরে কালো ধোঁয়া বের হলে হতাশা ছড়ায়, কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) সাদা ধোঁয়া নিশ্চিত করে ক্যাথলিকদের নতুন আধ্যাত্মিক নেতা পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে কতটি ব্যালট লেগেছে তা অজানা, তবে সাম্প্রতিক ইতিহাস অনুযায়ী এটি দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়েছে। ২০০৫ সালে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ চারটি ব্যালটে ও ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস পাঁচটি ব্যালটে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রথা অনুযায়ী, নির্বাচনের পর পোপ ‘রুম অব টিয়ার্স’-এ যান—যেখানে সদ্য নির্বাচিত পোপেরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো পোপের পোশাক পরেন। পরে সিক্সটিন চ্যাপেলে ফিরে কার্ডিনালদের আনুগত্য গ্রহণ করেন। এরপর বারান্দায় এসে এক জ্যেষ্ঠ কার্ডিনালের মাধ্যমে ঘোষণা হয়—‘হাবেমুস পাপাম’—আমাদের পোপ এসেছেন।

নতুন পোপের আগমনে উচ্ছ্বসিত জনতা রোমাঞ্চিত স্বরে চিৎকার করে ওঠেন—‘হাবেমুস পাপাম! ভিভা ইল পাপা!’

এরপর তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন এবং প্রথম ‘আর্বি এৎ অর্বি’ (শহর ও বিশ্বের উদ্দেশে) আশীর্বাদ প্রদান করেন।

পাস্টর না কূটনীতিক?

বিশ্ব রাজনীতির জটিলতা ও চার্চের অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য এই নির্বাচনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন অভিবাসী ও পরিবেশবান্ধব নীতি অনুসারী, তবে রক্ষণশীলরা তাঁকে নীতির রক্ষক হিসেবে না দেখে বিরক্ত হন।

নব্বই শতাংশ কার্ডিনালই ফ্রান্সিসের মনোনীত, কিন্তু তাতেও নিশ্চিত ছিল না তাঁর ধারার কেউ নির্বাচিত হবেন।

প্রশ্ন ছিল—নতুন পোপ একজন ধর্মগুরু, না  কূটনীতিক হবেন, উদারপন্থী হবেন না রক্ষণশীল, গির্জা পরিচালনা পর্ষদ, কুরিয়ার বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন এমন কেউ, নাকি আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার মতো বাইরের অঞ্চল থেকে, যেখানে খ্রিষ্টধর্ম আরও বিস্তার লাভ করছে।

কার্ডিনালদের কনক্লেভের আগে ডিন জিওভান্নি বাটিস্তা রে তাঁদের এমন কাউকে বেছে নিতে বলেন, যিনি চার্চের ঐক্য রক্ষা করতে পারবেন।

বিশ্বের জটিল পালাবদলের এই মুহূর্তে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আধুনিক যুগে চার্চকে টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জও নতুন পোপের সামনে। কেননা পাশ্চাত্যে পুরোহিতের সংখ্যা ও চার্চে উপস্থিতি ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

পোপের অভিষেক সাধারণত নির্বাচনের এক সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে এক বিশাল উপাসনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

প্রথমবারের মতো পোপ মোবাইল গাড়িতে করে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের চারদিকে ঘুরে দর্শনার্থীদের সম্ভাষণ জানাবেন, এরপর একটি ভাষণে নিজের অগ্রাধিকারের কথা জানাবেন।