বাসস
  ০৮ মে ২০২৫, ২১:৩৬
আপডেট : ০৮ মে ২০২৫, ২২:১১

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে নিজ আসনে হার মেনে নিলেন গ্রিন পার্টি নেতা

ঢাকা, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : অস্ট্রেলিয়ার গ্রিন পার্টির নেতা অ্যাডাম ব্যান্ট বৃহস্পতিবার নিজের পার্লামেন্ট আসনে হার স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এই পরাজয়ের জন্য দায়ী করেছেন ‘ভোটের ঢল’কে, যা ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির দিকে প্রবাহিত হয়।

সিডনি থেকে এএফপি জানায়, ব্যান্ট সাংবাদিকদের বলেন, ডানপন্থী বিরোধী নেতা পিটার ডাটনকে ঠেকাতে অনেকেই লেবার পার্টিকে ভোট দিয়েছেন। গত ১৫ বছর ধরে ধরে তিনি ‘মেলবোর্ন’ আসনটি ধরে রেখেছিলেন।

ব্যান্ট বলেন, ‘আমার মতোই, অনেকেই চেয়েছিলেন তাকে (ডাটনকে) ক্ষমতা থেকে যতদূর সম্ভব দূরে রাখতে।’

তিনি বলেন, ‘আমার প্রাথমিক মূল্যায়ন হলো, কিছু ভোট আমাদের দিক থেকে লেবারের দিকে চলে যায়, কারণ অনেকেই ডাটনকে ঠেকাতে লেবারকে সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখেছেন।’

‘ভোটে খুব বড় ধস না নামলেও, এতেই পার্থক্য হয়ে গেছে।’

৫৩ বছর বয়সী ব্যান্ট জানিয়েছেন, তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার প্রার্থিনী সারাহ উইটিকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং তার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।

বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজির নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি শনিবারের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে। আংশিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ১৫০ আসনের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে তারা অন্তত ৯২টি আসনে এগিয়ে।

গ্রিন পার্টি এখনো পর্যন্ত কোনো আসন নিশ্চিত করতে পারেনি, যদিও একটি আসনকে এখনও ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ হিসেবে ধরা হচ্ছে। গত পার্লামেন্টে গ্রিনদের চারটি আসন ছিল।

তবে ব্যান্ট বলেছেন, সিনেটে গ্রিনরা হয়তো ১৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে, যার ফলে তারা সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি হয়ে উঠতে পারে।

জলবায়ু সংকট বনাম পরমাণু বিদ্যুৎ

‘জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করার লক্ষ্যেই আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম,’ বলেন ব্যান্ট।

‘আমাদের সঙ্গে থেকে একটি পার্থক্য তৈরিতে সহায়তা করার জন্য মেলবোর্নের মানুষদের ধন্যবাদ দিতে চাই।’’

তিনি সতর্ক করেন, যদি সরকার তার এই বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে না লাগিয়ে জলবায়ু দূষণ হ্রাস এবং অস্ট্রেলিয়ার চরম বৈষম্য মোকাবেলায় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে বড় ধরনের ভোট ঘুরে যেতে পারে।

ডাটন, যিনি লিবারেল-ন্যাশনাল জোটের নেতা ছিলেন, নিজ আসন হারিয়েছেন এবং একই সঙ্গে তাঁর নেতৃত্বাধীন দল সাধারণ নির্বাচনে মারাত্মক পরাজয়ের মুখে পড়েছে।

ডাটনের ঘোষণা অনুযায়ী, তার সরকার ক্ষমতায় গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় সাতটি বৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করত, যার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরতা কমানো হতো।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সরকারি অর্থ ঢেলেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যুতের ৮২ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে। তবে একই সময়ে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পও অনুমোদন দিয়ে গেছেন।

ব্যান্ট বলেন, ‘সরকার বহু বছর ধরে ভাগ্যবান ছিল, কারণ তাদের প্রতিপক্ষ ছিল একজন ‘জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকারকারী’ ডাটন।

‘এতে সরকার নিজেদের ‘ভালো’ দেখাতে পেরেছে। নবায়নযোগ্য বনাম পরমাণু শক্তির রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে আমরা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে সরকার অনুমোদিত ৩০টির বেশি নতুন কয়লা ও গ্যাস প্রকল্পের দিকে।’

‘আমি অনুরোধ করব, জলবায়ু সংকটকে দয়া করে এখন গুরুত্ব সহকারে নিন এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনুন।’

দুই কন্যার জনক ব্যান্ট ২০২০ সালে গ্রিন পার্টির নেতৃত্ব পান। তিনি এর আগে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতেন, বিশেষ করে বেসরকারীকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত কয়লা শ্রমিকদের হয়ে আইনি লড়াই করতেন।