বাসস
  ০৮ মে ২০২৫, ২০:৩৯

এপ্রিলেও রেকর্ড ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রা অব্যাহত : কোপার্নিকাস

ঢাকা, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : বৈশ্বিক তাপমাত্রা এপ্রিল মাসেও রেকর্ড-সন্নিকট উচ্চতায় স্থির ছিল বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপার্নিকাস। অভূতপূর্ব এই তাপপ্রবাহ নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, পৃথিবীর উষ্ণতা কত দ্রুত হারে বাড়ছে।

প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, গত বছর উষ্ণ এল নিনো পরিস্থিতির প্রশমনের পর তাপমাত্রা কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের এপ্রিলেও তাপমাত্রা রেকর্ড বা রেকর্ড ছুঁই ছুঁই স্তরে গোঁ ধরে আছে।

‘২০২৫ সালেও তাপমাত্রা নামছে না’

জার্মানির পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের পরিচালক ইয়োহান রকস্ট্রম বলেন, ‘২০২৫ সালে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার কথা থাকলেও বৈশ্বিক তাপমাত্র এখনও হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা আগের স্তরেই আটকে আছে। এটি কেন হচ্ছে, এর পুরো ব্যাখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে এটি একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক লক্ষণ।’

কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানায়, এপ্রিল ছিল তাদের তথ্যভান্ডারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ মাস। এই তথ্য উপাত্ত উপগ্রহ, জাহাজ, বিমান ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের বিলিয়ন সংখ্যক পরিমাপ থেকে সংগৃহীত।

গত ২২ মাসের মধ্যে মাত্র এক মাস বাদে বাকি সব মাসেই বৈশ্বিক উষ্ণতা শিল্প-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল, যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে। এই সীমা অতিক্রম করা মানে বড় ও স্থায়ী পরিবেশগত পরিবর্তনের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়া।

লক্ষ্যমাত্রা হাতছাড়া

বহু বিজ্ঞানীর মতে, প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যসীমা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। তারা মনে করেন, এই সীমা কয়েক বছরের মধ্যেই অতিক্রম হবে।

অসংখ্য খ্যাতনামা জলবায়ু গবেষকের একটি বড় গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৩৬ ডিগ্রিতে পৌঁছায়। 

কোপার্নিকাস তাদের সাম্প্রতিক তথ্যে একে ১.৩৯ ডিগ্রি হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং পূর্বাভাস দিচ্ছে, বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে ২০২৯ সালের মাঝামাঝি সময়েই, এমনকি আরও আগেও এই সীমা অতিক্রম হতে পারে।

ইউরোপীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের সামান্থা বার্জেস বলেন, ‘এখন হিসেব বলছে, এই সীমা চার বছরের মধ্যেই ছাড়িয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ২ ডিগ্রির জায়গায় ১.৫১ ডিগ্রির মতো ছোট মাত্রার পার্থক্যেও গুরুত্ব দেওয়া।’

ফরাসি গবেষণা সংস্থা ঈঘজঝ-এর জলবায়ুবিজ্ঞানী জুলিয়ান ক্যাটিয়ো বলেন, ‘১.৫ ডিগ্রি সীমা ২০৩০ সালের আগেই ছাড়িয়ে যাবে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে তাই বলে পদক্ষেপ থেমে যাওয়া চলবে না। প্রতিটি দশমিক ডিগ্রি তফাতই গুরুত্বপূর্ণ।’

‘অস্বাভাবিক’ উষ্ণতা, কারণ অজানা

বিজ্ঞানীরা একমত যে, জীবাশ্ম জ্বালানির দহন দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রধান কারণ। তবে সম্প্রতি যে দীর্ঘস্থায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে অন্যান্য কিছু অনির্ধারিত উপাদানও ভূমিকা রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেঘের বৈশ্বিক বণ্টন পরিবর্তন, বায়ুবাহিত দূষণ এবং বন ও মহাসাগরের মতো প্রাকৃতিক কার্বন শোষকগুলোর কার্যক্ষমতার পরিবর্তনও এই অতিরিক্ত উষ্ণতার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই প্রবণতা ২০২৩ ও ২০২৪ সালকে রেকর্ডের সবচেয়ে উষ্ণ বছর করে তুলেছে। ২০২৫ সাল তৃতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে।

বার্জেস বলেন, ‘গত দুই বছর ছিল ব্যতিক্রমী। এখনও বৈজ্ঞানিক মডেল অনুযায়ী অনুমেয় মাত্রার ভেতরে থাকলেও আমরা সেই মাত্রার শিখরে চলে এসেছি।’

তবে তিনি যোগ করেন, ‘বর্তমান উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হয়েছে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদেও সত্যি কি না, তা বলার জন্য আমাদের আরও তথ্য দরকার।’

কোপার্নিকাসের রেকর্ড ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হলেও, বরফ স্তর, গাছের বয়স ও প্রবাল প্রাচীর বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা আরও বহু হাজার বছর আগের জলবায়ুর চিত্র অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন।

তাদের মতে, পৃথিবীর ইতিহাসে গত ১ লাখ ২৫ হাজার বছরে এটি সম্ভবত সবচেয়ে উষ্ণ সময়কাল।