বাসস
  ০৮ মে ২০২৫, ১৫:২৫
আপডেট : ০৮ মে ২০২৫, ১৬:২৮

পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনের সঙ্গে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর

ঢাকা, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, এটি কিয়েভের শান্তির প্রতি সদিচ্ছা যাচাইয়ের একটি উদ্যোগ; যদিও ইউক্রেন একে ‘প্রহসন’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

মস্কো থেকে এএফপি জানায়, যুদ্ধবিরতি উভয় পক্ষ মানছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট হয়নি। এই যুদ্ধবিরতি এমন সময় কার্যকর হলো, যখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং সার্বিয়ার আলেকসান্দার ভুচিচসহ বিশ্বনেতারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মস্কো অবস্থান করছেন।

পুতিন একতরফাভাবে এই যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে এটি শুক্রবার মস্কোর বিজয় দিবস প্যারেডের সঙ্গে একই দিনে শুরু হয়। ইউক্রেন এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি এবং একে ‘নাটক’ বলে প্রত্যাখ্যান করে বরং ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মস্কোর তিন বছরের সামরিক আগ্রাসন বন্ধের চেষ্টা করে আসছেন, কিন্তু বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

পুতিনের নির্দেশ কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত মস্কো ও কিয়েভ একে অপরের ওপর বিমান হামলা চালায়, যার ফলে রাশিয়ায় বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায় এবং ইউক্রেনে অন্তত দুইজন নিহত হন।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, বিরতির এই সময়কালে রুশ বাহিনী যুদ্ধবিরতি মানবে; তবে ইউক্রেন গোলাগুলি শুরু করলে ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার রাতে তার ভাষণে আবারও ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করিনি। এটি কূটনীতির একটি সুযোগ হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর আসছে না, বিশ্ব তা দেখছে।'

‘সরাসরি আলোচনা’

পুতিন গত মাসে ‘মানবিক উদ্যোগ’ হিসেবে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন । যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে এই সিদ্ধান্ত আসে।

তবে মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের একটি যৌথ প্রস্তাবে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন পুতিন। এরপর থেকে ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টায় রাশিয়া খুব অল্প সাড়া দিয়েছে।

ইউক্রেন বলেছে, তারা বিশ্বাস করে না যে রাশিয়া এই যুদ্ধবিরতি মানবে। এর আগে পুতিন ঘোষিত ৩০ ঘণ্টার ইস্টার যুদ্ধবিরতির সময় মস্কোর বিরুদ্ধে শত শত লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে তারা।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনের দিকে

১০০টির বেশি ড্রোন ও একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, এতে এক মা ও তার ছেলে নিহত হন বলে জানিয়েছে কিয়েভ।

যুদ্ধ বন্ধে অগ্রগতি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই হতাশ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শান্তি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বুধবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, 'আমাদের মনে হচ্ছে, সরাসরি আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। পুরো বিষয়টি আমাদের পক্ষে এককভাবে মীমাংসা করা সম্ভব নয়।'

‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশ’

রাশিয়া একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় দিবস উদযাপন করছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট পুতিন ভাষণ দেবেন।

এ বছর ৯ মে’র ২০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের প্যারেডে অংশ নিতে মস্কো আসার কথা রয়েছে।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, 'বিজয়ের এই মহান দিবস যেন শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশে উদযাপিত হয়, সে জন্য আমাদের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।,

তিনি আরও জানান, প্যারেডকে কেন্দ্র করে কিয়েভ থেকে হুমকির আশঙ্কায় ইন্টারনেট জ্যাম করা হয়েছে।

পেসকভ বলেন, 'আমাদের আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ—এই বাস্তবতা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। যতদিন অতিথিরা এখানে থাকবেন, অর্থাৎ ১০ মে পর্যন্ত কিছু বিধিনিষেধ বজায় রাখতে হবে।' তিনি মস্কোর বাসিন্দাদের সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রুশ বাহিনী বর্তমানে ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখলে রেখেছে এবং এ বসন্তে বেসামরিক এলাকায় একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।

‘আমরা ভয় পাই না’

মস্কোতে বিজয় দিবস উদযাপন দেখতে আসা বাইরের শহরের রুশ নাগরিকদের মধ্যে তেমন আতঙ্ক দেখা যায়নি।

'আমরা রোস্তভ অন দনের বাসিন্দা। আমাদের কিছুই ভীত করে না,' বলেন ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ভ্যালেরিয়া পাভলোভা। এই দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটি ইউক্রেন অভিযান পরিচালনায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি এবং হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে।

'এখানে তুলনামূলক অনেক শান্তিপূর্ণ,' তিনি যোগ করেন।

তবে মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ ও অন্যান্য শহরের বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা গেছে।

দিনের শুরুতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার একাধিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রীর যাত্রা ব্যাহত হয়।

রাশিয়ার ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন জানায়, মঙ্গলবার ও বুধবার ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় প্রায় ৩৫০টি ফ্লাইট ব্যাহত হয়। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রীরা মেঝেতে ঘুমাচ্ছেন এবং রানওয়েতে একাধিক বিমান সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধ রয়েছে।