বাসস
  ০৮ মে ২০২৫, ১২:২২

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরাইলি জাহাজে হামলা চালাবে হুথিরা

ঢাকা, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন হামলার অবসান ঘটিয়ে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরাইলি জাহাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা অব্যাহত রাখবে। হুথিরা তাদের উপকূলের কাছ দিয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথে হামলা বন্ধে রাজি হওয়ার একদিন পরই, হুথি রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য আবদুলমালিক আলেযরি এএফপিকে জানিয়েছেন যে, ইসরাইল এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। সানা থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।

তিনি বলেন, “এই চুক্তি কেবল মার্কিন ও অন্যান্য জাহাজের জন্য প্রযোজ্য, ইসরাইলের জন্য নয়। কাজেই ইসরাইলি জাহাজগুলো বাদে আন্তর্জাতিক সব জাহাজের জন্য এই জলপথ নিরাপদে চলাচল করতে পারবে ।

হুথিরা এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহ পর থেকে লোহিত সাগর ও গালফ অব এডেনে ইসরাইল সংশ্লষ্ট জাহাজগুলোতে হামলা শুরু করে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন সামরিক হামলা চালানোর পর হুথিরা তাদের হামলার পরিসর বাড়িয়ে এসব দেশের সাথে সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।

আলেযরি বলেন, এখন থেকে হুথিরা কেবলমাত্র ইসরাইলি জাহাজ-এর ওপর হামলা চালাবে। পূর্বে ইসরাইল সফরকারী বা ইসরাইলের সাথে সামান্য সম্পর্ক থাকা জাহাজগুলোকেও তারা লক্ষ্যবস্তু করত।

বুধবার হুথি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, তাদের বাহিনী দুটি হামলা চালিয়েছে—দক্ষিণ ইসরাইলের রামন বিমানবন্দরে দুটি ড্রোন এবং তেলআবিব অঞ্চলে "শত্রুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে" একটি ইয়াফা ড্রোন ব্যবহার করে।

"ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকায়ি আগেই ‘দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন বন্ধ হওয়াকে’ স্বাগত জানান এবং ইয়েমেনিদের ‘ঐতিহাসিক প্রতিরোধের’ প্রশংসা করেন।" 

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "সৌদি আরবও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। একইভাবে জাতিসংঘও এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে ইয়েমেন ও আশপাশের অঞ্চলে 'সংযম এবং উত্তেজনা হ্রাসের' আহ্বান জানিয়েছে।"

বিমানবন্দর হামলা: ইসরাইলের বেন গুরিওন বিমানবন্দরে হুথি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় সানা বিমানবন্দর অকার্যকর হয়ে পড়ার পর এই মার্কিন-হুথি চুক্তি ঘোষণা করা হয়। সানা বিমানবন্দরের পরিচালক খালেদ আল-শাইফ হুথিদের আল-মাসিরাহ টিভিকে জানান, ইসরাইলি হামলায় টার্মিনাল ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং এতে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

ওমান জানিয়েছে, তারা ওয়াশিংটন ও হুথিদের মধ্যে এমন একটি চুক্তি বাস্তবায়নে সাহায্য করেছে, যেখানে বলা হয়েছে "কোনও পক্ষই আর একে অপরকে লক্ষ্যবস্তু করবে না, যা নৌ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।" 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে উপসাগরীয় দেশগুলো সফর করবেন, এই চুক্তিকে তার সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে বলেন, “হুথিরা আত্মসমর্পণ করেছে। তারা বলেছে, তারা আর জাহাজ উড়িয়ে দেবে না, এটাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য।”

এই যুদ্ধবিরতির আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের হামলা ঠেকাতে ধারাবাহিক বিমান হামলা চালায়। হুথিদের তথ্য অনুসারে, এই হামলায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে বলে এএফপি জানিয়েছে।

পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্চের মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্র "রাফ রাইডার" নামের অভিযানে ইয়েমেনে ১,০০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

আলেযরি জানান, মাসকাটে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনার মাধ্যমে সানা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরোক্ষ যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়, যা যুদ্ধবিরতিতে রূপ নেয়।

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম আমাদের ওপর আগ্রাসন চালিয়েছিল এবং সেই সময়ে আমরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান পুনরায় শুরু করিনি।”

 “আমরা কোনও মার্কিন জাহাজ বা যুদ্ধজাহাজকে লক্ষ্য করিনি যতক্ষণ না তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”

হুথিদের বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কারণে লোহিত সাগরপথে কার্গো চলাচল ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যে পথটি বিশ্ব নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ পরিবহন করে। 

হুথিরা বলছে, তাদের এই অভিযান এবং ইসরাইলি ভূখণ্ডে ধারাবাহিক হামলা — ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির অংশ।