বাসস
  ০৭ মে ২০২৫, ১৩:১০

পেরুর আমাজনে বন ধ্বংস নিয়ে মেনোনাইটদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ঢাকা,  মে, ২০২৫ (বাসস) : দুনিয়ার ফুসফুস বলে খ্যাত আমাজন বন নিজেই ধীরে ধীরে অক্সিজেন হারাচ্ছে। আগুন, করাত, চাষের জমি আর খনিজ লোভীদের দৌরাত্মে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ রেইনফরেস্ট ভয়াবহ হুমকির মুখে। দক্ষিণ আমেরিকার নয়টি দেশে বিস্তৃত এই বনাঞ্চল বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেরও প্রধান স্তম্ভ। 

পেরুর আমাজন অংশে গত কয়েক বছরে উজাড় হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর প্রাকৃতিক বন। কৃষি সম্প্রসারণ, খনিজ খনন আর অবৈধ দখলের নামে চলেছে এই নিঃশব্দ ধ্বংসযজ্ঞ। 

সম্প্রতি দেশটির আমাজন অংশের মাসিসিয়া এলাকায় বন ধ্বংস এবং আদিবাসীদের জমি দখলের অভিযোগে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মেনোনাইট সম্প্রদায়কে ঘিরে এ উত্তেজনা তৈরি হয়। সম্প্রতি আদিবাসীরা তীর ও দা হাতে তাড়া করলে তাদের কয়েকজন খামার ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে কয়েকটি খামারবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

পেরুর আমাজন অঞ্চল মূলত পাঁচটি বড় অংশে বিস্তৃত। উকায়ালি তার মধ্যে অন্যতম। মাসিসিয়া ওই অঞ্চলেরই অংশ। এলাকাটি আমাজন বনের উপনদী উকায়ালির তীরে অবস্থিত। প্রত্যন্ত এলাকাটিতে নৌকায় বা হেঁটে যাওয়া ছাড়া যাতায়াতের ব্যবস্থা নাই।

অঞ্চলটিতে মেনোনাইট সম্প্রদায় বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় এক দশক আগে। কিন্তু সম্প্রতি বন উজাড়সহ নানা বিষয়ে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ের। বন উজাড়ের অভিযোগে এ পর্যন্ত ওই সম্প্রদায়ের ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে সরকার। ২০২৪ সালে দায়ের করা মামলায় ৮৯৪ হেক্টর প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়। সঙ্গে প্রত্যেককে ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদানের দাবি জানানো হয়।

যদিও আসামিপক্ষের আইনজীবী কার্লোস সিফুয়েন্তেসের দাবি, মেনোনাইটরা যে জমি কিনেছেন তা আগে থেকেই পরিষ্কার ছিল।

মেনোনাইটরা ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত খ্রিস্টান সম্প্রদায়। তারা আধুনিকতা পরিহার করে জীবনযাপন করেন। ২০২১ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ৩৯ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি দখল করে বসতি গড়েছেন এই মেনোনাইটরা।  

পেরুর ইমিরিয়া হ্রদের তীরে বাস করে শিপিবো-কনিবো নামের আদিবাসী সম্প্রদায়। তাদের অভিযোগ, মেনোনাইটরা তাদের ৫ হাজার হেক্টরের মধ্যে অন্তত ৬০০ হেক্টর দখল করেছে। সেখানে বনাঞ্চল সাফ করে খামার গড়ে তুলেছে। “মেনোনাইটদের বনের ঘুণপোকা” বলেও আখ্যা দেয়া হয়। আদিবাসী নেতা অ্যাবনার অ্যাঙ্কন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “তারা পরিবেশের বিরুদ্ধে অপরাধ করছে।”

মেনোনাইটরা মূলত বলিভিয়া থেকে এসেছে। ডেভিড ক্লাসেন নামে এক সদস্য জানান, চাষের জমি সংকট ও বলিভিয়ার কট্টর বামপন্থী নীতির কারণে তারা পেরুতে এসেছেন। বর্তমানে ৬৩টি পরিবার সেখানকার ৩২০০ হেক্টর জমিতে ধান, সয়াবিন চাষ করছেন। কেউ কেউ আবার গরু ও শূকর পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
তাদের পুরুষরা চেক শার্ট ও টুপি পরে। নারীরা লম্বা জামা পরে এবং তাদের চুলগুলো আঁটসাঁট বিনুনি বা খোঁপায়  বেঁধে রাখে। তারা মূলত জার্মান ভাষার উপভাষায় কথা বলে। বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের ধারণা ও যোগাযোগ দুটোই কম।

দশ বছর পাশপাশি বসবাসের পর গত বছর জুলাইয়ে হঠাৎ করে স্থানীয় আদিবাসীরা তাদের তাড়িয়ে দেয়। মেনোনাইট সদস্য ড্যানিয়েল ব্রাউন জানান, “তারা এসে বলল, এক-দু ঘণ্টার মধ্যে চলে যাও। তারপর আগুন লাগিয়ে দেয়।”

‘আন্দিজ অ্যামাজন পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি’ বলেছে, ২০১৭ সাল থেকে মেনোনাইটরা পেরুতে ৮৬৬০ হেক্টর বন ধ্বংস করেছে। পেরুতে গত ৩০ বছরে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর বন উজাড় হয়ে গেছে। যার বড় অংশই আগুন ও অবৈধ খননসহ নানা কারণে।

আদিবাসি সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেন বিশেষজ্ঞ পেদ্রো ফাভারন। তিনি বলেন, “মেনোনাইটদের কৃষিকাজ পরিবেশবান্ধব নয়। তবে, মাসিসিয়া অঞলের জমিগুলোর বেশিরভাগই আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।”

তবে, মেনোনাইট সদস্য ক্লাসেনের দাবি, “আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি, কোনকিছু ধ্বংস করতে চাই না।”