বাসস
  ০৭ মে ২০২৫, ১২:৫৫

অসুস্থ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মুদ্রানীতি শিথিল করেছে চীন

ঢাকা, ৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : দুর্বল ভোগ্যপণ্যের বাজার ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলার লক্ষে চীন বুধবার দেশটির সঙ্কুচিত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে মূল মুদ্রানীতির হাতিয়ারগুলো শিথিল করেছে। 

কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে চীন তার অর্থনীতি পুরোপুরি পুনরুদ্ধারে লড়াই করছে।

বেইজিং থেকে এএফপি জানায়, ধীর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পত্তি খাতের সংকটের কারণে পঙ্গু হয়ে পড়া প্রবৃদ্ধি কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। দেশটির নেতারা সেটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য লড়াই করছেন।

তবে তীব্র বাণিজ্য অচলাবস্থার কারণে এটি আরও জটিল হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনেক চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন এবং বেইজিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির ওপর ১২৫ শতাংশ  শুল্ক আরোপ করে এর প্রতিশোধ নিয়েছে।

বুধবার, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান প্যান গংশেং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বেইজিং গুরুত্বপূর্ণ সুদের হার কমাবে এবং ঋণ বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকগুলোর রিজার্ভে থাকার পরিমাণ কমাবে।

তিনি বলেন, বেইজিংয়ের নীতিমালার লক্ষ্য ‘প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে সমর্থন করা, খরচ বৃদ্ধি করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নকে উৎসাহিত করা।’

এক সময়ে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি সম্পত্তি খাতে স্থায়ী সংকট অর্থনীতির ওপর একটি চাপ হিসেবে রয়ে গেছে।

প্যান আরও বলেন চাহিদা বাড়ানোর প্রচেষ্টায়, ব্যাংক প্রথমবারের মতো বাড়ি ক্রয়ের পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণের সুদের হার ২.৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২.৬ শতাংশ করবে।

এই পদক্ষেপগুলো সেপ্টেম্বরের পর থেকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য চীনের সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।

তবে বিশ্লেষকরা অর্থনীতিকে আবার ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রকৃত উদ্দীপনা তহবিলের ক্রমাগত অভাবের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সভাপতি ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিওয়েই ঝাং একটি নোটে বলেছেন, ‘আজ প্রকাশিত নীতিগত পদক্ষেপগুলো বাজার এবং অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।’

তিনি আরও বলেন, এই সম্মেলনে যা অনুপস্থিত তা হল নতুন আর্থিক নীতিমালা, যদি অর্থনীতি বাণিজ্য যুদ্ধের শিকার হয় এবং মন্দার স্পষ্ট লক্ষণ দেখায় সেক্ষেত্রে তা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকতে পারে।

ন্যাটিক্সিসের এশিয়া প্যাসিফিকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ গ্যারি এনজি এএফপিকে বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির সহায়তা করতে আরও বেশি সময় লাগবে।’

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, দৃঢ়ভাবে সংহত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যে ব্যাঘাত ব্যবসাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, ভোক্তাদের জন্য দাম বাড়িয়ে দিতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণ হতে পারে।

গত মাসে বেইজিং উৎপাদনে মন্দার জন্য বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘তীব্র পরিবর্তনকে’ দায়ী করেছে।

মার্চ মাসে রপ্তানি ১২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

বেইজিং বলেছে, তারা এই বছর প্রায় পাঁচ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে, যা গত বছরের মতোই। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ একে উচ্চাভিলাষী বলে মনে করছেন।

গত বছর চীন তার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বেশ কিছু আগ্রাসী পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সুদের হার কমানো, বাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা, স্থানীয় সরকারের জন্য ঋণের সীমা বৃদ্ধি করা এবং আর্থিক বাজারের জন্য সহায়তা জোরদার করা।

বিশ্লেষকরা এখন মনে করছেন, শুল্কের প্রভাব বেইজিংকে তার সতর্কতা পুনর্বিবেচনা করতে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।