শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভারত-পাকিস্তান সেনারা প্রায় প্রতিরাতেই গুলি বিনিময় করছে, সেই সীমান্ত আকাশে চলেছে আরও এক যুদ্ধ- কবুতরের। দুই দেশের কবুতরপ্রেমীরা শতাব্দী প্রাচীন এক খেলা ‘কবুতরবাজি’-তে মেতে থাকেন, যাতে একে অপরের কবুতর ‘হাতিয়ে’ নেওয়ার চেষ্টা চলে নিয়মিত।
জম্মু থেকে এএফপি জানায়, ভারতের পাঞ্জাব সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম পাঙ্গালির কবুতরপ্রেমী ৩৩ বছর বয়সী পায়ারা সিংহ বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে কবুতর আসে, আমরা ধরতে পারি। তবে আমাদের অনেক কবুতরও ওদিকে চলে যায়।’
কাশ্মীরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী হামলার দায় পাকিস্তানের ওপরে চাপিয়ে ভারত আবারও পাল্টা হুমকি দিয়েছে। এপ্রিল ২২ তারিখে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষকে হত্যা করা হয়। নয়াদিল্লি এর জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করলেও পাকিস্তান এর সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যেই বলেছেন, এর জবাব আসবে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রতিরাতেই দুই দেশের সেনারা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলি চালাচ্ছে বলে ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
পুরোনো খেলা, নতুন আবেগ
সীমান্তের দুই পারেই কবুতরপ্রেমীদের একে অপরের সঙ্গে সরাসরি দেখা বা কথা বলার সুযোগ না থাকলেও তাদের আবেগ এক। ‘কবুতরবাজি’ নামের এই খেলার শিকড় কয়েক শতাব্দী পুরোনো। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের শেষে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের আগেও এই খেলার প্রচলন ছিল।
পায়ারা সিংহ তার গ্রাম পাঙ্গালির ছাদে বসে শতাধিক কবুতরের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘এটা এক পুরোনো শিল্প।’
বাঁশির শব্দ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কবুতরের উড়াল। কেউ তাদের সময় ধরে প্রতিযোগিতায় কবুতর উড়ান, কেউবা শুধু তাদের রঙ আর গুঞ্জনের ভেতরে খোঁজেন প্রশান্তি।
ভারতের সীমান্তঘেঁষা আরেক গ্রাম সেইন্তের কিশোর আরাভ খাজুরিয়া তার ২৯টি কবুতরের ভেতর তিনটি পাকিস্তান থেকে ধরে এনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কবুতরও ওদিক যায়। আমার দুইটা কবুতর পাকিস্তানে গেছে।’
চার বছর আগে কবুতর ধরার দৃশ্য দেখে খাজুরিয়ার আগ্রহ জন্মায়। এখন স্কুলে যাওয়ার আগে ও পরে ছাদেই সময় কাটান তিনি।
তবে সবচেয়ে গর্বের জায়গা? ‘পাকিস্তানের কবুতর ধরেছি,’ তিনি বলেন, সীমান্ত চিহ্নিত গাছগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে।
কবুতর ধরার কৌশল
পাকিস্তানের কবুতর কেন এত কাঙ্ক্ষিত? খাজুরিয়ার মতে, ‘ওদের কবুতর ভালোভাবে লালন-পালন করা হয়, তাই বেশি সময় উড়তে পারে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে, দম ভালো।’
যখন কোনো কবুতর অন্যপাশে চলে আসে, তখন পানির পাত্র, খাদ্যশস্য ও নিজের কবুতরের সাহায্যে সেটিকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। কবুতর একবার নামলে তার পালক কিছুটা কেটে দেওয়া হয়, যাতে সে উড়তে না পারে। এরপর সে ধীরে ধীরে নতুন দলে মানিয়ে নেয়।
গুপ্তচরের খোঁজে চোখ
পাকিস্তানের কবুতরদের পায়ে রিং, নাম, কিংবা কালি দিয়ে চিহ্ন দেওয়া থাকে। কখনও সেগুলো সন্দেহজনক বলে মনে হয়, এমনকি গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কাও হয়।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি কবুতর ‘আটক’ করেছে ‘পাকিস্তানি কিংবা চীনা গুপ্তচর’ সন্দেহে।
‘আমরা যদি কোনো সন্দেহজনক কবুতর ধরি, সেনাবাহিনীকে জানাই,’ বলেন পায়ারা সিংহ। ‘তবে এখনও ক্যামেরাসহ কোনো কবুতর ধরা পড়েনি,’ বলেই হেসে ওঠেন তিনি।
তবে একেবারে নির্দোষ কবুতর হলেও পাকিস্তান থেকে এলে সেটি ফেরত দেওয়া হয় না।
‘যদি স্থানীয় কারো কবুতর ধরি, আর তাকে চিনতে পারি, তবে ফোন করে ফেরত দিই,’ বলেন সিংহ। ‘কিন্তু পাকিস্তানের কবুতরের ক্ষেত্রে সেটা করি না। পরিস্থিতি এমন যে ওদের সাথে যোগাযোগ করলে ভবিষ্যতে ঝামেলা হতে পারে।’
কবুতরের কোনো সীমান্ত নেই
সিংহ বলেন, ‘যুদ্ধ না হলেই ভালো। তবে এপ্রিল ২২ তারিখের ঘটনা এত ভয়ংকর ছিল যে তার জবাব আসতেই হবে।’
তবু তিনি বিশ্বাস করেন, পাখির উড়াল কেউ আটকে রাখতে পারে না।
‘সীমান্তটা মানুষের জন্য। কবুতরের কোনো সীমান্ত নেই। কোনো সেনা কিংবা বেড়া তাদের আটকাতে পারবে না। আমাদের কবুতর যায় ওদিকে, ওদের কবুতর আসে আমাদের এখানে।’