শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজ্ঞানবিরোধী নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডের লায়েন।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, সোমবার প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘চুজ ইউরোপ ফর সায়েন্স’ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তারা এমন মন্তব্য করেন। পাশাপাশি ইউরোপে মার্কিন বিজ্ঞানীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নতুন এক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
ফন ডের লায়েন জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গবেষকদের আকৃষ্ট করতে ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর (৫৬৭ মিলিয়ন ডলার) একটি প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যথার্থ প্রণোদনা দিতে হবে।’
ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করলেও ইইউ প্রধান বলেন, আজকের বিশ্বে বিজ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এবং এটিকে তিনি ‘একটি বিপুল ভুল হিসেব’ হিসেবে অভিহিত করেন।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘এই মহান গণতান্ত্রিক দেশটি- যার অর্থনীতি অনেকটাই মুক্ত গবেষণার ওপর নির্ভরশীল- এমন একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেবে, তা আগে কল্পনাও করা যেত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো সরকারের এই একনায়কতান্ত্রিক নির্দেশ মানতে পারি না যে, আপনি এটা-সেটা নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন না।’
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাক্ষেত্রে সংকট
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক ও আর্থিক চাপ বেড়েছে। ব্যাপক ফেডারেল তহবিল ছাঁটাইয়ের হুমকির পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে বহিষ্কারের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
ফ্রান্স ও ইইউ এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে। এক প্রেসিডেন্ট সহকারীর ভাষায়, ‘আমরা কেবল গবেষকদের আশ্রয় দিতে চাচ্ছি না, বরং আমাদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা এবং একটি বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারও করতে চাই।’
সম্মেলনে ইইউ’র কমিশনার, বিজ্ঞানী, গবেষণা মন্ত্রী এবং নরওয়ে, যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
গবেষকদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়
ফ্রান্স এর আগেই বিদেশি গবেষকদের আহ্বান জানিয়ে ‘চুজ ফ্রান্স’ প্রচারণা চালিয়েছে। গত মাসে মাখোঁ বিদেশি গবেষকদের জন্য অর্থায়নের নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেন।
দক্ষিণ ফ্রান্সের অ্যক্সি-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয় মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সংকটে পড়া বিজ্ঞানীদের জন্য ‘সেইফ প্লেস ফর সায়েন্স’ প্রকল্প চালু করে। ইতোমধ্যে তারা বিপুলসংখ্যক আবেদন পেয়েছে বলে জানায়।
ফ্রান্সের জাতীয় গবেষণা সংস্থা সিএনআরএস-ও বিদেশি গবেষকদের আকৃষ্ট করতে নতুন প্রকল্প শুরু করেছে। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট আন্তোইন পেতিত বলেন, অনেক ফরাসি বিজ্ঞানীও যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে ফ্রান্সে ফিরতে আগ্রহী, কারণ তারা ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানদের বড় করতে চান না।
সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
ইইউ গবেষণা কাঠামো ও জীবনমানের দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক হলেও অর্থায়ন ও বেতনের দিক থেকে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে রয়েছে। তবে পেতিতের মতে, ইউরোপে শিক্ষাব্যয় ও চিকিৎসা সেবার খরচ কম হওয়ায় এই ব্যবধান কিছুটা সামান্য হয়ে আসে।
ফ্রান্স ও ইইউ গবেষণার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, জলবায়ু, জৈববৈচিত্র্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মহাকাশুএই পাঁচটি খাতকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রকল্পে সরকার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থায়ন করতে পারে। পাশাপাশি করছাড়সহ নানা ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথাও বিবেচনায় রয়েছে।