শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ‘একতরফা’ এবং এর পেছনে কোনো অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন থাইল্যান্ডের সাবেক অর্থমন্ত্রী সুচার্ত থাদাথামরংভেচ। তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘অযৌক্তিক দাবি’ মেনে নেওয়া দেশগুলোর জন্য পরিণতি হতে পারে আরও ভয়াবহ।
সম্প্রতি ব্যাংককে সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুচার্ট বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে মাথা নোয়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।' তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এসব শুল্কনীতি শুধু থাইল্যান্ডের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই নয়, নিজ দেশের ভোক্তাদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সাবেক এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'যদি আপনি একবার মাথা নত করেন, তাহলে সে (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) আরও দাবি জানাবে। এটা থামার কোনো সম্ভাবনাই নেই।'
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক শুল্কনীতি এবং তা পরিবর্তনের প্রবণতা বৈশ্বিক বাণিজ্যে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে সুচার্ট যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির যৌক্তিকতা খারিজ করে দিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক গবেষণায় দেখা গেছে—এমন পদক্ষেপের খেসারত মূলত দিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদেরই, রপ্তানিকারক দেশগুলোর নয়।
'যুক্তরাষ্ট্র নিজের জনগণকেই কষ্ট দিচ্ছে,' বলেন সুচার্ত। 'সুপারমার্কেট থেকে পণ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে, আর দাম আকাশছোঁয়া হয়ে উঠছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রা ছাপিয়ে তা দিয়ে বিশ্ববাজার থেকে পণ্য কিনে আসছে। তারা খুব বেশি অভিযোগ করতে পারে না, কারণ মানুষ বাস্তব পণ্যের বিনিময়ে তাদের ছাপানো টাকা গ্রহণ করছে।'
থাই রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি শুল্ক অস্থিরতার কারণে বড় সংকটে পড়ছে বলে জানান তিনি। রপ্তানি পরিকল্পনার জন্য সাধারণত কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া লাগে, কিন্তু নীতিতে আকস্মিক পরিবর্তন উৎপাদন ও বিপণনের কৌশল বদলানোকে কঠিন করে তোলে।
থাইল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২.১ শতাংশে নামিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কচাপ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে এ বছর প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে মাত্র ১.৩ শতাংশে।
সুচার্ত সব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বার্থে অনড় থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর উচিত মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে অবস্থান বজায় রাখা, বিকল্প বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক স্বার্থ সুরক্ষায় আসিয়ান কাঠামোর মাধ্যমে সমন্বয় বৃদ্ধি করা।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'যেসব দেশের নীতিতে অনিশ্চয়তা বেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।'