শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (৫ মে, ২০২৫) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি রুদ্ধ দ্বার পরামর্শসভা আয়োজন করতে যাচ্ছে। ইসলামাবাদ এই বিষয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানানোর পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পাকিস্তান ১৫ সদস্যবিশিষ্ট ক্ষমতাধর নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে, আর চলতি মে মাসে পরিষদের সভাপতিত্ব করছে গ্রিস।
নয়াদিল্লি থেকে পিটিআই জানায়, ইসলামাবাদ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা নিয়ে 'রুদ্ধ দ্বার পরামর্শ’ চেয়ে আবেদন জানায়, যার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রিস আজ বিকেলে এই বৈঠকটি আয়োজনের সময়সূচি ঠিক করে।
পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য- চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র - ছাড়াও দশটি অস্থায়ী সদস্য হলো: আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া ও সোমালিয়া।
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্রতর হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘে গ্রিসের স্থায়ী প্রতিনিধি ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত এভানজেলোস সেকেরিস বলেন,
'যদি কেউ বৈঠকের অনুরোধ করে, তাহলে সেটা হওয়া উচিত। কারণ মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকলে সেটা হয়তো উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করতেও সাহায্য করতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি... তবে এটি সম্ভবত খুব শিগগিরই ঘটতে পারে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে পিটিআই-এর এক প্রশ্নের জবাবে সেকেরিস বলেন, “এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু।
তিনি বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসবাদের যেকোনো ঘটনার নিন্দা জানাই। পাহালগামে যেটা ঘটেছে, সেটা একটি জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা - সেখানে নিরীহ বেসামরিক মানুষের প্রাণ গেছে। আমরা ভারতের সরকার, নেপালের সরকার এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসবাদের যেকোনো রূপ, যেকোনো জায়গায় ঘটলে তার নিন্দা করি। একই সঙ্গে আমরা এই অঞ্চলে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দুটি বড় দেশ - অবশ্যই, ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বড়।'
পাহালগাম হামলায় ২৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পর, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরিষদের সব সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, চীন ও পাকিস্তান বাদে।
এই আলোচনায় তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'এই হামলার পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।'
তিনি গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ জেরাপেট্রিতিসের সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করেন এবং হামলা বিষয়ে মতবিনিময় করেন। জয়শঙ্কর বলেন, 'সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গ্রিসের কঠোর অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের কৌশলগত অংশীদারত্ব আমাদের সম্পর্কের গভীরতাকে প্রতিফলিত করে।'
এছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যুক্তরাজ্যের ডেভিড ল্যামি, ফ্রান্সের জ্যাঁ-নোয়েল বারো, দক্ষিণ কোরিয়ার চো তায়ে-ইউল, ডেনমার্কের লার্স লকে রাসমুসেন, সিয়েরা লিওনের টিমোথি মুসা কাব্বা, আলজেরিয়ার আহমেদ আতাফ, গায়ানার হিউ হিলটন টড, স্লোভেনিয়ার তানজা ফায়োন, সোমালিয়ার আব্দিসালাম আব্দি আলি ও পানামার জাভিয়ের মার্তিনেজ-আচা ভাসকেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
গত শুক্রবার জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমরা মনে করি, পরিস্থিতি বিবেচনায় যখন প্রয়োজন মনে করব, তখনই বৈঠক ডাকার অধিকার আমাদের রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে যা ঘটছে, তার পেছনে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতির পটভূমি। একটি ঘটনা ঘটেছে, সেটি সত্য, কিন্তু তারপর যা তৈরি হয়েছে, তা শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। তাই নিরাপত্তা পরিষদের এটি আলোচনায় আনার অধিকার রয়েছে। আমরা আগের এবং বর্তমান সভাপতির সঙ্গেও আলোচনা করেছি। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।'
গত সপ্তাহে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন।