শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : প্রথমবারের মতো সরকার নিয়ন্ত্রিত পোর্ট সুদানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে আরএসএফ। সুদানে দুই বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে গতকালই এলাকাটিতে হামলা চালানো হয়। এমন তথ্য জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও সীমিত।
জানা গেছে, সম্প্রতি খার্তুমসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হাতছাড়া হয়ে যায় র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ)। মূলত এরপর থেকেই ড্রোন হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে আরএসএফ।
সুদানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাবিল আব্দাল্লাহ বিবৃতিতে জানান, "আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে ওসমান দিগনা বিমানঘাঁটি, একটি গুদাম ও পোর্ট সুদান শহরের কিছু বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে আরএসএফ।"
রেড সি মিলিটারি রিজিয়নের কমান্ডার মাহজুব বুশরা দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সুনাকে বলেন, হামলাটি সাড়ে ৩ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। সেসময় মোট ১১টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
এএফপি’র তোলা ছবিতে দেখা যায়, বিমানবন্দর এলাকায় ধোঁয়া উড়ছে। এটি আরএসএফ নিয়ন্ত্রিত খার্তুম থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরে।
গতকাল বিকেলেই এএফপির এক সংবাদদাতা জানান, একটি ড্রোন লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী আরেকটি বিমানঘাঁটির দিকে ছোড়া হয়েছিল। তবে সেটি প্রতিহত করে সুদানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ইরিত্রিয়া সীমান্তবর্তী কাসালা শহরে তিনটি ড্রোন বিমানবন্দরে আঘাত হানে। সেখানে প্রথমবারের মতো হামলা হয়েছিল একদিন আগে।
অন্যদিকে, উত্তর কোরদোফানের রাজধানী আল-ওবেইদের বাসিন্দারা প্রথমে ড্রোন উড়তে দেখেন। এর কিছুসময় পর বিস্ফোরণ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান। প্রায় দুই বছর আরএসএফ অবরুদ্ধ করে রাখার পর গত ফেব্রুয়ারিতে শহরটিকে মুক্ত করা হয়।
গতকাল রোববার ভোরে পোর্ট সুদানে এএফপির সংবাদদাতা জানান, বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি। বিস্ফোরণের শব্দে সেখানেও কেঁপে ওঠে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা পোর্ট সুদান বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। তবে সেটি ফের চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
মোহাম্মদ হামদান দাগলোর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক বাহিনীটি কার্যত সুদানের শাসক আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধ করছে। এতে এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখ।
সংঘাতের প্রাথমিক পর্যায়েই রাজধানী খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে স্থানান্তর করে সরকার। তার পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতা থেকে মুক্ত ছিল এলাকাটি। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাও তাদের কার্যক্রম পোর্ট সুদানে স্থানান্তর করে। ফলে সেখানে লাখ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নেয়।
এই সংঘাত আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদানকে কার্যত বিভক্ত করে ফেলেছে। দেশটির কেন্দ্র, পূর্ব ও উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী। আর দারফুর ও দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা দখল করে রেখেছে আরএসএফ। যুদ্ধবিমান না থাকায়, আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ড্রোনের ওপর নির্ভর করছে আধা সামরিক বাহিনীটি।
সুদানের বিশ্লেষক হামিদ খালাফাল্লাহ জানান, খার্তুম হারানোর ধাক্কার পর আরএসএফ এখন দূরপাল্লার ড্রোনের ওপর আরও বেশি নির্ভর করছে। কারণ তাদের ধারণা, কৌশল না পাল্টালে দারফুরেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে তারা।"
ড্রোন আরএসএফকে "উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোতে আতঙ্ক সৃষ্টি ও অস্থিতিশীলতা তৈরিতে" সাহায্য করছে করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, আরএসএফকে উন্নত ড্রোন সরবরাহের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দায়ি করেছে সুদান সরকার। যদিও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদল, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তোলা এধরণের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করছে আমিরাত।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব পরিচালিত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, দারফুরের নিয়ালা বিমানবন্দরে আরএসএফের দখলে ছয়টি অত্যাধুনিক ড্রোন রয়েছে। চীনে তৈরি এসব ড্রোন দূলপাল্লার নজরদারি ও হামলার সক্ষমতা রাখে।
অন্যদিকে, পোর্ট সুদান ও কাসালার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আরএসএফের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির এরা আগে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছিল। মিশরের অভিযোগ, এসব হামলা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে "স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্থ করছে।"
এএফপি-কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলেন, "এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে বার্তা দেওয়া। আরএসএফ বোঝাতে চায়, তাদের প্রতিপক্ষের জন্য এখন কোনো স্থানই নিরাপদ নয়।" তিনি আরও বলেন, "তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য, বিমান চলাচল বন্ধ রাখা। যাতে করে সশস্ত্র বাহিনীর রসদ সরবরাহ ব্যাহত হয়।"