শিরোনাম
ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ (বাসস): প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার এনবিসি নিউজে সম্প্রচারিত এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান মেনে চলার প্রয়োজন আছে কি না তা তিনি জানেন না।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ৭৮ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা আরও জানান, তিনি আমেরিকান সংবিধানে অনুমোদন না থাকা তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন না এবং বর্তমান অর্থনীতির খারাপ দিকগুলোর জন্য তার পূর্বসূরি জো বাইডেনকে দায়ী করেন।
গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প একাধিকবার সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে চলার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ব্যাপক হারে আদালতের রায় ছাড়াই বহিষ্কারের নীতি গ্রহণের কারণে তিনি সমালোচিত হন।
তিনি দাবি করেন, এটি একটি 'জাতীয় জরুরি অবস্থা' এবং প্রত্যেক অভিবাসীকে আদালতের মাধ্যমে বিচারের সুযোগ দেওয়া হলে এতে '৩০০ বছর' লেগে যাবে।
এনবিসির 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ক্রিস্টেন ওয়েলকার যখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির সব নাগরিক ও অ-নাগরিক আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে কি না, ট্রাম্প উত্তর দেন: 'আমি আইনজীবী না। আমি জানি না।'
আরও স্পষ্টভাবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন: 'আমি জানি না।'
এই সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার ধারণ করা হলেও রোববার তা সম্প্রচারিত হয় এবং দ্রুত ওয়াশিংটনে আলোড়ন তোলে, এমনকি রিপাবলিকানদের ভেতরেও।
তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচন?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
তবুও, মার্চ মাসে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার কথা 'মজা করে বলেননি' এবং এর 'উপায়' রয়েছে।
তবে এনবিসিকে তিনি বলেন, 'এটা আমি করতে চাই না।' যদিও তার ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের অফিসিয়াল স্টোরে ইতোমধ্যে 'ট্রাম্প ২০২৮' লেখা লাল টুপি বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমি দুর্দান্ত চার বছর কাটাতে চাই এবং পরে কাউকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই—আদর্শভাবে কোনো মহান রিপাবলিকানকে, যে এটি সামনে এগিয়ে নেবে।'
কে হতে পারেন সেই উত্তরসূরি? জবাবে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিওর নাম উল্লেখ করেন এবং বলেন, 'আমাদের দলে অনেক ভালো মানুষ আছে।'
তবে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, সমালোচকরা যেভাবে তার বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করছেন, সে বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কী—তখন ট্রাম্প কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন:
'প্রশ্নটা অন্যভাবে করুন। অনেকে আমাদের দেশে আসতে চায়। অনেকেই ট্রাম্পকে ভালোবাসে। আমি নির্বাচন জিতেছি।'
‘আমরাই কানাডাকে ভর্তুকি দেই’
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের ১০০ দিন অর্থনৈতিক অস্থিরতায় পরিপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে তার পরিকল্পিত ব্যাপক আমদানিশুল্ক আরোপের কারণে।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হলেও, ট্রাম্প এই সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, 'ট্যারিফ আমাদের বিত্তশালী করে তুলবে।'
তিনি বলেন, 'ভালো দিকগুলো ট্রাম্প অর্থনীতি, খারাপ দিকগুলো বাইডেন অর্থনীতি।'
এছাড়া তিনি দাবি করেন, কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে পেট্রোলের দাম কমে গ্যালনে ১.৯৮ ডলার হয়েছে। যদিও আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এ সপ্তাহে সর্বনিম্ন গড় দাম ছিল ২.৬৫ ডলার এবং জাতীয় গড় ৩.১৬ ডলার।
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি হোয়াইট হাউস সফরের দুই দিন আগে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার আহ্বান পুনরায় জানাবেন?
উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি সবসময় এ নিয়ে কথা বলব।' তিনি অভিযোগ করেন, 'আমরাই কানাডাকে ভর্তুকি দেই,' কারণ আমাদের সঙ্গে তাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
তবে তিনি বলেন, কানাডার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ 'একেবারেই অসম্ভব।'
তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় না আমরা কখনও এমন পর্যায়ে যাব।'
তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির প্রশংসা করেন এবং জানান, ১৪ জুন তার ৭৯তম জন্মদিন উপলক্ষে ওয়াশিংটনে একটি বড় সামরিক কুচকাওয়াজ হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা একটি বড়, সুন্দর প্যারেড করব।' ব্যয়বহুল এই আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, 'আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র আছে, আর আমরা সেটাই উদযাপন করব।'