শিরোনাম
ঢাকা, ৪ মে ২০২৫ (বাসস): চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৭ থেকে ১০ মে রাশিয়া সফর করবেন এবং নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয় উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অংশ নেবেন বলে রোববার জানিয়েছে ক্রেমলিন।
এই সফর এমন এক সময় হচ্ছে, যখন বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্ক আরোপ ঘিরে উত্তেজনা চরমে, এবং পুতিন ৯ মে রাশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় দিবস উপলক্ষে ইউক্রেনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসনের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে মস্কো ও বেইজিং ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’ ঘোষণা করে। এরপর থেকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে, যা পশ্চিমা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, শি জিনপিং ও পুতিনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ‘অংশীদারত্ব ও কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়ন’ এবং ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যু’ নিয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়া জানানো হয়েছে, ‘সরকার ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একাধিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।’
ইউক্রেনে ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। তবে এই সিদ্ধান্তকে ‘নাটকীয়তা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তিন বছর ধরে চলা এই সংঘাতে চীন নিজেকে ‘নিরপেক্ষ পক্ষ’ হিসেবে উপস্থাপন করলেও পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ—রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মস্কোর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন নিশ্চিত করেছে।
এপ্রিলে জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং অন্তত ১৫৫ জন চীনা নাগরিক রুশ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে—বেইজিং অবশ্য এই অভিযোগকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
রোববার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় গভীর রূপান্তর চলাকালে চীন ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।’
‘বুলিংয়ের বিরুদ্ধে’ ঐক্য
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি জানিয়েছে, মুখপাত্র বলেন, ‘জাতিসংঘ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) ও ব্রিকস-এর মতো বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে চীন ও রাশিয়া ঘনিষ্ঠ সমন্বয় জোরদার করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বৈশ্বিক দক্ষিণকে ঐক্যবদ্ধ করবে, বিশ্ব শাসনব্যবস্থাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে, একপাক্ষিকতা ও দাদাগিরির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবে এবং একটি সমতা ও শৃঙ্খলাপূর্ণ বহুধ্রুব বিশ্ব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বায়নকে এগিয়ে নেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। পাল্টা জবাবে চীনও ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রসঙ্গে চীনা মুখপাত্র বলেন, ‘এশিয়া ও ইউরোপে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রধান দুটি শক্তি হিসেবে চীন ও রাশিয়া অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট যুদ্ধে বিজয়ের জন্য বিরাট ত্যাগ ও ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে।’
৯ মে মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পাশাপাশি আরও অনেক দেশের নেতা অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মধ্যে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্ররাও রয়েছেন।
‘ক্রেমলিন ইউক্রেন যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।