বাসস
  ০৪ মে ২০২৫, ১৮:৩১
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ২১:২১

চরম ডানপন্থী এএফডি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেবেন জার্মানির মের্ৎস?

ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : জার্মানির রক্ষণশীল নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎস আগামী সপ্তাহে ক্ষমতা গ্রহণ করার পরপরই একটি কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন: তিনি কি ‘নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত উগ্র-ডানপন্থী দল’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া এএফডিকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেবেন?

বার্লিন থেকে এএফপি জানায়, জন্মের এক দশক পর জনপ্রিয়তায় ঊর্ধ্বমুখী অভিবাসনবিরোধী দল ‘আলটারনেটিভ ফর জার্মানি’ (এএফডি)ুকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকেই। তাদের যুক্তি, দলটি উদার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই মূল্যায়নের ভিত্তি জোরালো হয়েছে শুক্রবার, যখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি এক বহুল প্রতীক্ষিত প্রতিবেদনে এএফডিকে একটি নিশ্চিত উগ্র-ডানপন্থী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। ম্যধ্য-ডানপন্থী চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের বিদায়ের ঠিক আগে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের প্রস্তুতি চলছিল বহু বছর ধরেই।

তবে এএফডিকে নিষিদ্ধ করার বিরোধিতা করছেন বহু জার্মান। তাদের মতে, এতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আফডিকে ভোট দেওয়া ২০ শতাংশ নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব হবে এবং দলটি ‘বহির্বিশ্বে উপেক্ষিত শহীদ’ হিসেবে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

মের্ৎসের জন্য আন্তর্জাতিক চাপও তৈরি হতে পারে। বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের তরফ থেকে। তারা ইতোমধ্যেই বিএফভির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে এবং অতীতে এএফডির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

জার্মান রাজনীতিতে বহু বছর ধরেই এএফডিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ঘুরেফিরে এসেছে। যদিও এতে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং কঠোর সাংবিধানিক বাধার সম্ভাবনা রয়েছে।

এএফডির জ্যেষ্ঠ এমপি বিট্রিক্স ফন র্স্টখ শুক্রবার বলেন, ‘আফডিকে দেওয়া প্রতিটি ভোট এখন গণতন্ত্র রক্ষার একটি ভোট।’

কী ঘটেছে শুক্রবার?

জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি শুক্রবার এএফডিকে একটি ‘নিশ্চিত উগ্র-ডানপন্থী দল’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে। সংস্থাটি জানায়, দলটির শীর্ষ নেতারা ‘বিদ্বেষমূলক, সংখ্যালঘুবিরোধী, ইসলাম-বিদ্বেষী ও মুসলিমবিরোধী’ বক্তব্য দিয়ে থাকেন।

এই শ্রেণিবিন্যাসের ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে দলটির ওপর যেমন ফোনে আড়িপাতা বা গোপন তথ্যদাতার মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হলো।

বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার বলেন, এএফডি তাদের বক্তব্যে ‘অভিবাসী পটভূমির নাগরিকদের দ্বিতীয় শ্রেণির জার্মান’ হিসেবে উপস্থাপন করে।

‘তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থান বিশেষ করে অভিবাসী ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বক্তব্যে প্রকাশ পায়।’

এএফডি’র সহ-নেতা এলিস ভাইডেল ও টিনো ক্রুপাল্লা একে ‘জার্মান গণতন্ত্রের ওপর একটি ভয়াবহ আঘাত’ হিসেবে আখ্যা দেন। তারা বলেন, বর্তমান জরিপ অনুযায়ী এএফডি দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী দল।

তাদের অভিযোগ, এএফডিকে ‘প্রকাশ্যে অপবাদ দেওয়া ও অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে’ এবং দলটি আদালতে এর বিরুদ্ধে লড়বে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জার্মানির এই সিদ্ধান্তকে ‘নতুন বার্লিন প্রাচীর নির্মাণ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন, আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একে ‘ছদ্মবেশী স্বৈরতন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘জার্মানির উচিত এই পথে না যাওয়া।’

এএফডিকে নিষিদ্ধ করতে কারা চায়?

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অনেক আগে থেকেই আফডিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবির অন্যতম প্রবক্তা রক্ষণশীল সিডিইউ দলের সাবেক এমপি মার্কো ভান্ডারভিৎজ। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম শুরু করার।’

তিনি জার্মান সাপ্তাহিক ভেল্ট আম জোনটাগ পত্রিকাকে বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষ এখন অবশেষে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে।”

তিনি ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ‘গণতন্ত্রের শত্রুদের প্রতি সহনশীলতা ও সহযোগিতা শূন্য হওয়া উচিত।’

এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হয়েছেন শ্লেসভিগ-হোলস্টাইনের সিডিইউ মুখ্যমন্ত্রী ডানিয়েল গুন্থার। তিনি ডার স্পাইগেলুকে বলেন, ‘সরকারের এখনই গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম শুরু করা উচিত।’

তিনি বলেন, এএফডি ‘অনেক আগেই তাদের সংবিধানবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছে’ এবং নতুন শ্রেণিবিন্যাস ‘আশা করি তাদের ভোটারদের দলটির বিপদ সম্পর্কে সচেতন করবে।’

এসপিডি এমপি রাল্ফ স্টেগনার-ও এএফডিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে উন্মুক্ত মনোভাব পোষণ করেছেন।

তিনি হানডেলসব্লাটকে বলেন, ‘গণতন্ত্রপন্থীরা রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সব মাধ্যম ব্যবহার করে এই গণতন্ত্রবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়বে যতক্ষণ না আমাদের মুক্ত গণতন্ত্র থেকে তাদের হুমকি দূর হয়।’

এএফডিকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান সংবিধান একটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কঠোর বাধা রেখেছে- হিটলারের জার্মানিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা হয়েছিল বলেই এই সতর্কতা।

১৯৪৫ সালের পর এখন পর্যন্ত কেবল দুটি দল নিষিদ্ধ হয়েছে- ১৯৫২ সালে নাৎসি-উত্তর এসআরপি এবং ১৯৫৬ সালে পশ্চিম জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি (কেপিডি)।

সংবিধানিক আদালতে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার আবেদন করতে পারে সংসদের দুই কক্ষের যেকোনো একটি বা কেন্দ্রীয় সরকার।

২০১৭ সালে আদালত উগ্র-ডানপন্থী এনপিডিকে নিষিদ্ধ করার আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালতের মতে, দলটি এতটাই প্রান্তিক ছিল যে তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি নয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফেজার বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট কঠিন এবং তা যৌক্তিক কারণেই। একে পুরোপুরি অস্বীকার করা উচিত নয়, তবে সাবধানতা বজায় রাখতে হবে।’

বিদায়ী চ্যান্সেলর শোলৎজও সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিল্ড পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যেখানে তাড়াহুড়া করা উচিত নয়।’

বামপন্থী বিএসডব্লিউ (বিএসডব্লিউ) দলের নেত্রী সাহরা ভাগেঙ্কনেখ্ত বলেন, এএফডিকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ ‘দলটির ভোটারদের গালে চড় মারা’ এবং এতে তাদের মত বদলানোর সম্ভাবনা নেই।