শিরোনাম
ঢাকা, ৪ মে ২০২৫ (বাসস) : ব্রিটেনের কট্টর ডানপন্থী দল রিফর্ম ইউকে দেশটির সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সাফল্যের ঝড় তুলে যুক্তরাজ্যের দুই-দলীয় আধিপত্যের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছে। দলটি ইতোমধ্যেই পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনকে লক্ষ্য করে ডাউনিং স্ট্রিটে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাজ্যের রানকর্ন থেকে এএফপি জানায়, নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন ব্রেক্সিট পার্টি থেকে উদ্ভূত রিফর্ম ইউকে দলটি এই নির্বাচনে ৬৭০টির বেশি স্থানীয় কাউন্সিল আসন এবং প্রথমবারের মতো দুটি মেয়র পদে জয়লাভ করেছে।
বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ জয় এসেছে ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রানকর্নে একটি উপনির্বাচনে, যেখানে দলটি প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের মধ্য-বাম লেবার পার্টির কাছ থেকে পার্লামেন্টারি আসন ছিনিয়ে নেয়।
‘আমরা পারব এবং জিতব’
'আমরা পারব এবং আমরা পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে জিতব'—শুক্রবার ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের স্ট্যাফোর্ডশায়ারে নতুন নির্বাচিত রিফর্ম কাউন্সিলরদের উদ্দেশে এমন ঘোষণা দেন ফারাজ। আগামী চার বছরের মধ্যে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
যদিও নির্বাচনের আওতা ছিল দেশের মোট আসনের একটি ক্ষুদ্র অংশ, তবুও এটি রিফর্ম ইউকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে দলটি পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেছিল।
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি অধ্যাপক টিম বেইল বলেন, 'এটি যুক্তরাজ্যে পপুলিস্ট র্যাডিকাল রাইট পার্টির সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স।'
দলটি জীবনযাত্রার ব্যয় এবং অভিবাসন-সংক্রান্ত উদ্বেগকে ব্যবহার করে ব্রিটেনের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি জনবিরক্তিকে পুঁজি করছে। ফারাজের ‘বন্ধু’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই তিনিও কর ও জনখরচে বিরোধী এবং 'ব্রিটেনকে আবার মহান করার' আহ্বান জানান।
রিফর্ম ইউকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা নির্বাচিত হওয়া স্থানীয় কাউন্সিলে ডিইআই (বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি ও সাম্য) ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করবে।
‘হতাশ জনগণ’ ও জনপ্রিয়তা
জাতীয় জরিপে নিয়মিতভাবে এগিয়ে থাকা রিফর্ম দলটি এখন ব্রিটেনের বড় অংশের জনমনে স্থায়ী ছাপ ফেলছে। রানকর্নের ৭০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত পিটার শার্লিকার বলেন, ফারাজ তাকে ‘অনুপ্রাণিত’ করেন। টানা ৩০ বছর ধরে কনজারভেটিভদের ভোট দিয়ে আসার পর এইবার তিনি রিফর্মকে ভোট দিয়েছেন, কারণ তিনি অভিবাসন ইস্যুতে 'খুবই উদ্বিগ্ন'।
তবে মাত্র কিছু মাস আগেও রিফর্ম ইউকে তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে সমস্যায় ছিল। বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্য একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছিল দলটিকে। এরপর দলটি মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম জোরদার করে একটি নির্বাচনী যন্ত্রে রূপ নেয়।
'ওরা খুব চাতুর্যের সঙ্গে নিজেদের এজেন্ডা এমন সব সুবিধাবঞ্চিত শ্বেতাঙ্গ শহরে চাপিয়ে দিয়েছে, যেসব জায়গা সহজেই প্রভাবিত হয়,' বলেন রানকর্নের এক স্কুলশিক্ষিকা রেবেকা থমাস।
ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্সের গবেষক পল হোয়াইটলি বলেন, দলটি স্থানীয় নির্বাচনে সর্বাধিক প্রার্থী দিয়েছে এবং দাবি করেছে, তাদের সদস্য সংখ্যা ২,২৫,০০০-এর বেশি।
রিফর্ম নেতা ফারাজ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্রামাঞ্চল, ছোট শহর ও শিল্প পতনের শিকার এলাকাগুলোতে নিয়মিত সফর করেছেন।
'আমরা এই ব্যবস্থায় ক্লান্ত। দেশটা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে,' বলেন রানকর্নের বাসিন্দা গিলিয়ান ব্র্যাডি। তার অভিযোগ, উচ্চ কর, অভিবাসন এবং এনএইচএসের মতো সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্ভোগ।
ব্রিটিশ পরিচয়ের রক্ষাকর্তা?
রিফর্ম ইউকে ব্রিটিশ পরিচয় রক্ষার ইস্যুতে সরব হয়েছে। তারা প্রায় এক দশক আগে শুরু হওয়া একটি ধর্ষণ কেলেঙ্কারির উদাহরণ টেনে বলেছে, যেখানে বেশিরভাগ ভুক্তভোগী ছিলেন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ কিশোরী এবং অপরাধীরা মূলত দক্ষিণ এশীয় পটভূমির পুরুষ।
কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক রাসেল ফস্টার বলেন, রিফর্ম ইউকে আর কেবল প্রতিবাদের দল নয়; অনেকের কাছে এখন এটি "তাদের একমাত্র বিকল্প।"
‘আমরা সিরিয়াস’ প্রমাণের আহ্বান
অন্যদিকে ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী ডানপন্থী দল কনজারভেটিভ পার্টি, যারা দুই শতাব্দী ধরে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, এবারও করুণ ভরাডুবির মুখে পড়েছে।
বর্তমান দলনেতা কেমি বাদেনকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি দল ছেড়ে রিফর্মে যোগ দিয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্যতম লিংকনশায়ারের নবনির্বাচিত মেয়র আন্দ্রেয়া জেনকিনস।
ফারাজ ইতোমধ্যেই রিফর্ম ও কনজারভেটিভদের ভবিষ্যৎ কোনো জোটের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন, রিফর্ম ‘ডুবিয়ে দিয়েছে’ টোরিদের।
'এখন কঠিন কাজ শুরু হলো,' বলেন স্ট্যাফোর্ডশায়ারের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মার্টিন মারে। বিজয়োত্তর ভাষণে তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের সক্ষমতা দেখাতে চাই, কারণ সেটিই গোটা দেশকে দেখাবে যে আমরা সিরিয়াস।'
তবে টিম বেইল মনে করেন, 'নাইজেল ফারাজকে যত মানুষ পছন্দ করে, তার চেয়ে বেশি মানুষ তাকে অপছন্দ করে।'