শিরোনাম
ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের গবেষকেরা মনে করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব, এবং এই প্রযুক্তির পেছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকলে তা নির্ভরযোগ্য থেরাপির বিকল্প হতে পারে।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, তাদের তৈরি অ্যাপ্লিকেশন ‘থেরাবট’ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সংকট মোকাবেলার জন্য এক নতুন দিক উন্মোচন করছে।
ডার্টমাউথের ডেটা সায়েন্স ও মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিক জ্যাকবসন বলেন, 'বর্তমান সংখ্যার চেয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা দশগুণ বাড়ালেও চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। আমাদের একেবারেই নতুন কিছু দরকার।'
তার নেতৃত্বে পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও খাওয়ার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় থেরাবট কার্যকর।
আপাতত প্রচলিত থেরাপির সঙ্গে তুলনামূলক একটি পরীক্ষা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থা ‘আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (এপিএ)-'র স্বাস্থ্য উদ্ভাবন পরিচালক ভাইল রাইট বলেন, 'এমন এক ভবিষ্যতের দিকে আমরা এগোচ্ছি, যেখানে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত ও বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় নির্মিত এআই থেরাপিস্ট থাকবে।'
তবে শিশু-কিশোরদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
প্রায় ছয় বছর ধরে এই প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছেন ডার্টমাউথের দলটি। প্রকল্পের সহ-নেতা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল হেইন্জ বলেন, 'লাভের পেছনে ছোটার ফলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে পুরো উদ্যোগটাই ব্যর্থ হতে পারে।'
তারা থেরাবটকে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের কথাও ভাবছেন, যাতে দরিদ্র বা সুবিধাবঞ্চিতরা সাশ্রয়ী ডিজিটাল থেরাপির সুবিধা পান।
‘চেয়ার নাকি চেকবুক?’
বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্যের নামে বাজারে থাকা অনেক অ্যাপ লাভের আশায় তৈরি, এবং এগুলো সচরাচর ব্যবহারকারীদের যা শুনতে ভালো লাগে তাই বলে থাকে—অথচ বাস্তব ভিত্তি দুর্বল।
এপিএ-র ভাইল রাইট বলেন, অনেক অ্যাপ তরুণ ব্যবহারকারীদের প্রতারিত করে।
তবে ‘থেরাবট’-এর মতো দায়িত্বশীল প্রকল্পগুলো এসব ব্যবসায়িক মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাপের ভিড়ে আলাদা জায়গা করে নিতে পারে।
ডার্টমাউথ দল কেবল থেরাপির প্রতিলিপি ব্যবহার করেনি, বরং নিজেরাই কৃত্রিম রোগী-চিকিৎসক কথোপকথন তৈরি করেছে যেন সুরক্ষা বজায় থাকে।
তবে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এখনও এসব এআই থেরাপি অ্যাপকে ‘চিকিৎসা যন্ত্র’ হিসেবে সরাসরি অনুমোদন দেয় না, বরং প্রাসঙ্গিক নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে বাজারজাত করার অনুমতি দেয়।
‘চিকিৎসক সবসময়ই অনলাইন’
একই ক্ষেত্রে কাজ করছে আরও কিছু স্টার্টআপ।
‘ইয়ারকিক’-এর প্রধান নির্বাহী হারবার্ট বেয় জানান, তাদের তৈরি ‘পান্ডা’ নামের এআই থেরাপিস্ট অতিমাত্রায় নিরাপদ। এটি সঙ্কট বা আত্মহত্যাপ্রবণ আচরণ শনাক্ত করে সাহায্যের সংকেত পাঠাতে পারে।
তিনি বলেন, 'রাতে ২টায় থেরাপিস্টকে ফোন করা সম্ভব না হলেও, চ্যাটবট সবসময়ই অনলাইনে।'
এদিকে একজন ব্যবহারকারী, যিনি নিজের নাম দারেন বলেই পরিচয় দেন, বলেন যে ট্রমা স্ট্রেসে তিনি চ্যাটজিপিটিকে সহায়ক হিসেবে পেয়েছেন, যদিও এটি সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তৈরি নয়।
'আমার ক্ষেত্রে এটা কাজে দিয়েছে,' তিনি বলেন। 'যারা উদ্বেগে ভোগে, আমি তাদের এটা ব্যবহার করার পরামর্শ দেব।'