শিরোনাম
ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এই সপ্তাহে সুদের হার কমানোর বিষয়ে আবারও বিরতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির ও পর্যায়ক্রমিক শুল্ক নীতির অর্থনীতির ওপর প্রভাব কী হবে—তা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ফেড অপেক্ষা করতে চায়।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছেন। পাশাপাশি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ‘বেসলাইন’ শুল্ক এবং স্টিল, গাড়ি ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
তবে অন্য বেশ কয়েকটি বাণিজ্য অংশীদারের ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক কার্যকর করার সিদ্ধান্ত জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যচুক্তি পুনঃআলোচনার সুযোগ পায়।
বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদের ধারণা, জানুয়ারি থেকে আরোপিত এসব শুল্ক মূল্যস্ফীতি বাড়াবে এবং অন্তত স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। ফলে ফেড তার নীতি হালনাগাদে আরও সময় নিতে পারে।
সাবেক ক্লিভল্যান্ড ফেড প্রেসিডেন্ট লোরেটা মেসটার বলেন, 'ফেডের উচিত এখন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া, যাতে তা আবারও দীর্ঘমেয়াদে ঊর্ধ্বমুখী না হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'নইলে গত তিন বছরে মূল্যস্ফীতি কমাতে যা কিছু করা হয়েছে, তা বিফলে যেতে পারে।'
‘স্থিতিশীল অবস্থানে’ ফেড
২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ফেড সুদের হার ৪.২৫ থেকে ৪.৫০ শতাংশের মধ্যে ধরে রেখেছে। এর লক্ষ্য হলো মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং একইসঙ্গে বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখা।
ট্রাম্প ঘোষিত ‘লিবারেশন ডে’ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগোচ্ছিল। বেকারত্বও ইতিহাসের নিম্নপর্যায়ে স্থিতিশীল ছিল।
তবে, ভোক্তা আস্থা সূচকের মতো কিছু ‘সফট ডেটা’ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
মেসটার বলেন, 'মন্দায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করবে কি না, তা বলা কঠিন। তবে আমার মনে হয় ফেড কমিটি এখনও ভালো অবস্থানে আছে এবং সম্ভবত তারা এই বৈঠকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে।'
স্ট. লুইস ফেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম বুলার্ড বলেন, 'ট্রেড ওয়ারের এই অস্থির পরিস্থিতিতে ফেডের জন্য স্থির থাকা একটি ভালো সিদ্ধান্ত।'
সুদহার কমাতে আরও সময় লাগবে?
গত সপ্তাহে প্রকাশিত এপ্রিল মাসের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্য প্রত্যাশার চেয়ে ভালো এসেছে। এতে শ্রমবাজার নিয়ে উদ্বেগ কমেছে এবং ফেডের ওপর হার কমানোর চাপও কিছুটা কমেছে।
গোল্ডম্যান শ্যাচস ও বার্কলেজসহ কয়েকটি বড় ব্যাংক তাদের সুদহার কমানোর সম্ভাব্য সময় জুন থেকে পিছিয়ে জুলাই করেছে।
বার্কলেজের বিশ্লেষকদের মতে, 'জুলাইয়ে হার কমালে কমিটি আরও কিছু তথ্য পাবে, বিশেষ করে শ্রমবাজারের গতি এবং শুল্ক ও রাজস্ব নীতির অনিশ্চয়তা দূর হবে।'
তবে অন্য বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের প্রভাব বিবেচনায় হার কমানোর সময় আরও পিছিয়ে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক জরিপগুলোয় দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা বেড়েছে। বাজারভিত্তিক পরিমাপ যদিও এখনো ২ শতাংশের আশপাশেই রয়েছে।
অন্যদিকে, পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের বুলার্ড বলেন, 'জরিপভিত্তিক প্রত্যাশার চেয়ে বাজারভিত্তিক সূচক অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। জরিপের ফলাফল রাজনীতি বা অন্য নানা বিষয়ের কারণে অতিরঞ্জিতও হতে পারে।'