শিরোনাম
ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : দক্ষিণ সুদানের উত্তরের একটি শহরে এক বিমান হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। চিকিৎসা সহায়তাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এ তথ্য জানিয়েছে।
খার্তুম থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে এমএসএফ জানায়, শহরটির ওল্ড ফ্যাঙ্গাকে চালানো হামলায় কার্যকর হাসপাতাল ও ফার্মেসি ধ্বংস হয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে সংস্থাটি আহ্বান জানিয়েছে, বোমাবর্ষণ বন্ধ করুন, বেসামরিক নাগরিক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করুন।
এ হামলার পেছনে কারা ছিল বা কেন হাসপাতালটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হলো-তা স্পষ্ট নয়। দেশটির সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ সুদানে প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশার-এর অনুগত বাহিনীর মধ্যে পুরোনো শত্রুতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিশেষ করে নুয়ের জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ফ্যাঙ্গাক অঞ্চলে, যা ঐতিহ্যগতভাবে মাশারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দূতাবাস এক যৌথ বিবৃতিতে সম্প্রতি সতর্ক করেছে, দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি গভীরভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে। তারা প্রেসিডেন্ট কিরকে মাশারকে মুক্তি দিয়ে সংলাপে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে।
২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দক্ষিণ সুদান ২০১৩ সালেই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ডিনকা ও নুয়ের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন এবং নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে প্রাণ হারায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। যদিও ২০১৮ সালে শান্তিচুক্তি ও জাতীয় ঐক্য সরকার গঠিত হয়, বর্তমানে পরিস্থিতি আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
২০২৩ সালে দেশটিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এরইমধ্যে এটি দুইবার পিছিয়েছে। ২০২৬ সালের আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।
দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ভিসা বাতিলের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ভিসা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে নতুন করে আর কোনো ভিসা দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি। ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
পতিবেদন মতে, শনিবার (৫ এপ্রিল) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক ঘোষণায় জানান, দক্ষিণ সুদানের পাসপোর্টধারীদের জন্য ইস্যু করা ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। যা তৎক্ষণাৎ কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি।
কারণ হিসেবে রুবিও জানান, দক্ষিণ সুদানের অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো তার দেশের নাগরিকদের সময় মতো গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গত শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে জানায়, দক্ষিণ সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সুযোগ নেয়া বন্ধ করার’ সময় এসেছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছেন। তার বহুল বিতর্কিত এই নীতির একটি মূল দিক হলো ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের বিতাড়ন।
এই নীতির অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। গত তিন মাসে কয়েক হাজার অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে।
বিশ্বের নবীনতম দেশ দক্ষিণ সুদান, পাশাপাশি একটি দরিদ্র দেশও। এখানে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেশি, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা চলমান। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত হয়, যেখানে প্রায় ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ‘অস্থায়ী সুরক্ষা স্ট্যাটাস’ দেয়, যার ফলে তারা নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। তবে এই স্ট্যাটাস ২০২৫ সালের ৩ মে শেষ হয়ে যাবে। তখন দক্ষিণ সুদানিরা যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার জন্য আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।