বাসস
  ০৪ মে ২০২৫, ১০:১৫

ট্রাম্পের মোকাবিলায় কানাডার অর্থনীতিতে বড় রূপান্তরের অঙ্গীকার কারনির

ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোকাবিলায় কানাডার অর্থনীতিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের পর এটিই হবে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক রূপান্তর, শুক্রবার এমনটিই ঘোষণা দেন তিনি।

অটোয়া থেকে এএফপি জানায়, গত সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ট্রাম্পের হুমকি ও কানাডার সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে ঘিরে প্রচারণা চালিয়ে লিবারেল পার্টিকে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এনেছেন কারনি। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৭২ আসনের চেয়ে তিনটি কম পেয়েছে দলটি, তবে ১৬৯টি নিশ্চিত আসন নিয়ে আইন পাসের জন্য তারা যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দুটি আসনে পুনর্গণনায় কুইবেক প্রদেশে একটি আসন হারালেও অন্টারিওতে একটি আসন পুনরুদ্ধার করেছে লিবারেল পার্টি।

জয়ের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আত্মবিশ্বাসী সুরে কথা বলেন কারনি। সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান বলেন, 'আমি রাজনীতিতে এসেছি কিছু হতে নয়, কিছু করতে।'

'কানাডীয়রা আমাকে দ্রুত বড় পরিবর্তন আনার জন্য যে ম্যান্ডেট দিয়েছে, আমি নিরলসভাবে সে আস্থার প্রতিদান দেব,' বলেন তিনি।

 ট্রাম্প প্রসঙ্গ  

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক, যা ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ ও বাণিজ্যিকভাবে নির্ভরশীলতা এখন তার তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেন কারনি। তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে বৈঠক করবেন তিনি।

'কানাডীয়রা আমাকে ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে নির্বাচিত করেছে,' বলেন কারনি। তার ভাষায়, 'আমরা নিবিড় মনোযোগ ও সংকল্প নিয়ে কাজ করবো।'

'আমাদের মনোযোগ থাকবে তাৎক্ষণিক বাণিজ্যচাপের পাশাপাশি দুই সার্বভৌম দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কের ওপর,' বলেন তিনি।

তবে কারনি সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই কোনো ‘সাদা ধোঁয়া’-অর্থাৎ নাটকীয় অগ্রগতি—আসার আশা না করাই ভালো।

নির্বাচনী প্রচারের সময় দেওয়া বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করে কারনি বলেন, উত্তর আমেরিকার এই দুই প্রতিবেশীর আগের সম্পর্ক, যা ছিল ক্রমবর্ধমান সংহতির ওপর নির্ভরশীল, সেটি এখন ইতিহাস।

'এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভবিষ্যতে আমাদের দুই দেশ কীভাবে সহযোগিতা করবে,' বলেন তিনি।

ট্রাম্প ‘শক্তিকে সম্মান করে’-এ কথা উল্লেখ করে কারনি বলেন, এ কারণেই তিনি বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন ও নতুন আবাসন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল ব্লক কুইবেকোয়া—নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি ও ইস্পাতসহ বিভিন্ন খাতে ধার্যকৃত শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে। 

কারনি, যিনি এর আগে কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন, প্রতিশ্রুতি দেন যে, যতদিন ওয়াশিংটনের শুল্ক অব্যাহত থাকবে, ততদিন কানাডাও পাল্টা শুল্ক বহাল রাখবে।

ু ‘অর্থনৈতিক নিয়তি’  

'এটা এক উত্তেজনাপূর্ণ সময় হতে যাচ্ছে, যখন আমরা আমাদের অর্থনৈতিক নিয়তি নিজেদের হাতে তুলে নেব এবং নতুন এক কানাডীয় অর্থনীতি গড়ব,' বলেন কারনি।

এই লক্ষ্যে আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে কানাডার বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য-প্রতিবন্ধকতা বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন তিনি। পাশাপাশি ‘বিশ্বস্ত মিত্রদের’ সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন।

'কানাডার আছে সেই সম্পদ, যা বিশ্ব চায়—আর আমরা লালন করি সেই মূল্যবোধ, যা বিশ্ব সম্মান করে,' বলেন তিনি।

কারনি জানান, আগামী ১২ মে সপ্তাহে তিনি নতুন লিবারেল সরকার ঘোষণা করবেন এবং ২৬ মে পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হবে।

ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান রাজা তৃতীয় চার্ল পার্লামেন্টের উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন বলেও জানান তিনি।

'এটি এক ঐতিহাসিক সম্মান, যা আমাদের সময়ের গুরুত্বের সঙ্গে মানানসই,' বলেন কারনি।

তিনি বলেন, 'এটি আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের একটি সুস্পষ্ট ঘোষণা'—ট্রাম্পের ‘কানাডাকে ৫১তম মার্কিন রাজ্যে রূপান্তর’ করার উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করে।

উল্লেখ্য, কানাডার পার্লামেন্ট অধিবেশনের সূচনা বক্তব্য সাধারণত গভর্নর জেনারেল প্রদান করেন, যিনি রাজা বা রাজার প্রতিনিধি।