শিরোনাম
ঢাকা, ৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে এখন আর এশিয়া থেকে আসা কনটেইনার খালাসের ব্যস্ততা নেই, ক্রেনগুলোর কাজ থমকে আছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম এই বন্দরের চিরচেনা কোলাহল এখন অনেকটাই স্তব্ধ।
‘এখন এখানে পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে, যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক,’ এএফপিকে বলেন বন্দর পরিচালক জিন সেরোকা।
এই অনানুষ্ঠানিক সূচকে স্পষ্ট, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শ্লথতার মুখে।
পাশের লং বিচ বন্দরসহ এই এলাকা যুক্তরাষ্ট্রে চীনসহ এশিয়ার পণ্য আমদানির সবচেয়ে বড় প্রবেশদ্বার। ফলে বাণিজ্যসংক্রান্ত চলমান সংকটের প্রথম ধাক্কাই লেগেছে এখানে। যার প্রভাব পড়ছে লাখ লাখ আমেরিকানের জীবনে।
ট্রাম্পের কখনো আরোপ, কখনো প্রত্যাহার করা শুল্কনীতি এবং এর জবাবে অন্যান্য দেশের পাল্টা পদক্ষেপ আমদানিকারকদের ভীত করেছে। ফলে আসবাব, খেলনা ও পোশাকের মতো পণ্যের অর্ডার কমে গেছে।
সেরোকা জানান, ৪ মে‘র সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ কম পণ্য আসবে।
লং বিচ বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মে মাসজুড়েই আমদানিতে প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া বহু জাহাজ এই দুই বন্দরে আসার যাত্রা বাতিল করেছে।
‘বহু খুচরা বিক্রেতা ও উৎপাদক এখন চীন থেকে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে,’ বলেন সেরোকা।
চীনের ওপর ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক সবচেয়ে বেশি, কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে যা ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যের রপ্তানি ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৫০ হাজার কোটি ডলার, জানায় বেইজিং।
চলতি বছরে বিক্রি না বাড়লেও, মূল্য যে বাড়বে, তা নিশ্চিত।
‘মূলত এখন চীনে তৈরি একেকটি পণ্যের দাম গত মাসের তুলনায় আড়াই গুণ বেড়ে গেছে,” বলেন সেরোকা।
খালি তাক
গত মাসে ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর নানা ধরনের শুল্ক ঘোষণা করেন, এমনকি এমন একটি দ্বীপের ওপরও, যেখানে মূলত পেঙ্গুইনের বাস—যার সূত্রপাত হয় এক রহস্যময় ফর্মুলা দিয়ে, যা অর্থনীতিবিদদেরও হতবুদ্ধি করেছে।
কয়েকদিন পর আবারও অবস্থান পরিবর্তন করে তিনি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে সাধারণ শুল্ক আরোপ করেন।
এই বাড়তি ব্যয় আমদানিকারককে দিতে হয়, বিক্রেতাকে নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এর প্রভাব পড়বে।
‘এটা শুধু পশ্চিম উপকূলের সমস্যা নয়,’ সতর্ক করেন লং বিচ বন্দর পরিচালক মারিও কর্ডেরো।
‘এটা প্রভাব ফেলবে সব বন্দরে—পূর্ব হোক বা গালফ অব মেক্সিকো, যাকে ট্রাম্প এখন থেকে ‘গালফ অব আমেরিকা‘ নামে ডাকতে বলেছেন।’
বছরের শুরুতে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত শুল্কের আগেই কর বাঁচাতে অনেক আমেরিকান প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে পণ্য আমদানি করে মজুত করেছিল। বন্দরে মালভর্তি কনটেইনারের ঢল নামে। কিন্তু শুল্কের বাস্তব প্রয়োগে এখন ক্রয় কমিয়ে সেই মজুদ খরচ করতেই বেশি আগ্রহী তারা।
হোয়াইট হাউস যদি অবস্থান না পাল্টায়, তাহলে দোকান কিংবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের স্বল্পতা স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেন সেরোকা।
‘আমেরিকান আমদানিকারকরা, বিশেষ করে খুচরা খাতে, আমাকে বলছেন—তাদের কাছে এখন মাত্র পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহের পণ্যের মজুদ আছে,’ জানান তিনি।
‘বাণিজ্যবিরোধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দোকান কিংবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের সংখ্যা কমে যাবে। ফলে আমেরিকান ভোক্তার সামনে থাকবে সীমিত বিকল্প আর বাড়তি দাম।’
‘সরাসরি ভোক্তার পকেটে এর ধাক্কা লাগবে।’
‘ট্রাম্পকে নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ’
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ৯ লাখ লজিস্টিক্স কর্মীর একজন আন্তোনিও মোনটালবো ইতোমধ্যেই সমস্যায় পড়েছেন।
একটি ছোট ট্রাকিং কোম্পানির মালিক তিনি। ট্রাকের একটি পার্টস, যার উৎপত্তি চীনে, আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ দাম।
‘ট্রাম্প আমাদের জন্য বন্দরে একটি বৈরী পরিবেশ তৈরি করেছেন,’ বলেন ৩৭ বছর বয়সী মোনটালবো।
‘আমরা ট্রাম্পের ওপর ক্ষুব্ধ। ওনাকে দেশের পরিস্থিতি একটু দেখে নেওয়া উচিত। কারণ এখানে প্রচুর ট্রাকচালক এখন রেগে আছেন।’
‘উনি মনে হয় সাধারণ মানুষ বা শ্রমজীবীদের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।’
রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কাজ কমে যাওয়ায় আগামী ছয় মাসের মধ্যেই কর্মী ছাঁটাই করতে হতে পারে বলে জানান তিনি।
গত নভেম্বরে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন মোনটালবো। কারণ মূল্যস্ফীতিতে তিনি বিরক্ত ছিলেন, আর ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেছিলেন অর্থনীতি ঠিক করে দেবেন।
‘ভাবছিলাম, উনি একজন ব্যবসায়ী।’
‘কিন্তু এখন আমাদের সামনে এসেছে মূল্যস্ফীতির চেয়েও ভয়াবহ কিছু, এটা হলো শুল্ক।’