শিরোনাম
ঢাকা, ৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভারতের হামলার হুমকির কারণে পাকিস্তানের কাশ্মীর উপত্যকার সুউচ্চ শৃঙ্গ এবং সবুজ উপত্যকার মধ্যে সাধারণত পর্যটন মৌসুমের শুরুতে হোটেলগুলো খালি এবং রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের অংশে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলার পর থেকে পরমাণু শক্তিধর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সেনাবাহিনীকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যখন ইসলামাবাদ এই সপ্তাহের শুরুতে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ আছে-ভারত আসন্ন হামলার পরিকল্পনা করছে।
পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র নীলম উপত্যকার শীতল আবহাওয়ায় মে মাসে ঋতু শুরু হয়, যখন দেশের অন্যান্য অংশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পটের ২২ বছর বয়সী আলোকচিত্রী মুহাম্মদ আওয়াইস বলেছেন, ‘এটি সত্যিই খুব খারাপ শুরু হয়েছে।’
জেলা প্রশাসনের মতে, পর্যটন হল নীলম উপত্যকার জীবনরেখা, যা প্রতি বছর সমগ্র পাকিস্তান থেকে ৩ লক্ষেরও বেশি দর্শনার্থীকে আর্কৃষ্ট করে।
স্থানীয় জনসংখ্যার বেশিরভাগই প্রায় ৩৫০টি গেস্টহাউসের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে হাজার হাজার পরিবারের কর্মসংস্থান নির্ভর করে।
আওয়াইস এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমাদের জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশী, এবং এটি ছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
‘যেভাবে জিনিসগুলো উন্মোচিত হচ্ছে তা খুবই ধীর, এবং এটি আমাদের কাজকে খারাপভাবে প্রভাবিত করছে।’
এই সপ্তাহে সেনা চেকপয়েন্টে পুলিশ এবং সৈন্যরা পর্যটকদের উপত্যকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল, শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের চেকপয়েন্ট দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল।
পরিবর্তে পর্যটকদের মূল শহর মুজাফ্ফরাবাদে ফিরে যেতে বলা হয়েছিল।
রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন সলিম উদ্দিন সিদ্দিক। তিনি বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত হতাশাজনক যে, সরকার আমাদের সতর্ক করেনি বা পরিদর্শনের বিরুদ্ধে পরামর্শ দেয়নি।’
৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক বলেছেন, ‘আমাদের আশা এখন ধূলিসাৎ।’
- ‘আমরা যুদ্ধ চাই না’ -
গত মাসে পেহেলগামে হামলায় ইসলামাবাদ তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে এবং অস্থির প্রতিবেশীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে একের পর এক শাস্তিমূলক কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশ সামরিকীকরণকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অর্থাৎ কার্যত সীমান্তে টানা নয় রাত ধরে গুলি বিনিময় করেছে।
শনিবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘সৈন্যদের অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করার’ লক্ষ্যে ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) পাল্লার একটি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরীক্ষা করেছে।
আলোচনার মাধ্যমে তাদের মতপার্থক্য নিরসনের জন্য নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়ের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের সম্পূর্ণ দাবি নিয়ে হিমালয় অঞ্চল নিয়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।
ভারতের কঠোর সুরক্ষিত সীমান্তে, চেনাব নদীর তীরবর্তী কৃষিজ গ্রামের বাসিন্দারা ১৯৯৯ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী সেনাবাহিনীর মধ্যে শেষ বড় সংঘর্ষের সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করে সীমান্ত থেকে পরিবারগুলোকে ফিরিয়ে নিয়েছেন।
পরিবারের সাথে খোলা মাঠে আনন্দ উপভোগ করতে আসা হিন্দু পুরুষদের লক্ষ্য করে হামলার পর থেকে সীমান্তের ভারতীয় অংশেও পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
শীতকালে স্কিইং করার জন্য এবং গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ থেকে বাঁচতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলটিকে ছুটির গন্তব্য হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে।
পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের আঞ্চলিক সরকার মাদরাসা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে এবং বাসিন্দাদের খাদ্য মজুদ করার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে, কিছু পর্যটক অবিচলিতভাবে আসতে থাকেন।
মুদাসার মাকসুদ, ৩৯ বছর বয়সী একজন কারখানা কর্মী বলেছেন, ‘আমরা মনে করি না যে সম্ভাব্য যুদ্ধের হুমকি
গুরুতর’। তিনি ৬৩০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে পূর্বাঞ্চলীয় শহর কাসুরের বাসিন্দা। তাকে তার বন্ধুদের সাথে উপত্যকায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের রুটিন জীবন ব্যাহত করা উচিত নয়।’
বেসরকারি পর্যটন সমিতির সভাপতি রাজা ইফতিখার খান বলেছেন, পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত ভয়াবহ’ হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেছেন, ‘এই ব্যাঘাত পর্যটনের সাথে জড়িত সকলের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়েছে।’
‘আমরা যুদ্ধ চাই না. কোনো বিচক্ষণ ব্যবসায়ী কখনও তা চায় না।’