বাসস
  ০৩ মে ২০২৫, ১৪:১১
আপডেট : ০৩ মে ২০২৫, ১৭:৪১

জাপানে মন্দা ও হোটেল ভাড়া বৃদ্ধি, গোল্ডেন উইকের ছুটিতে দেশি পর্যটকদের ভ্রমণে অনীহা

ঢাকা, ৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : গেল শনিবার থেকে পুরোদমে গোল্ডেন উইকের ছুটি শুরু হয়েছে চেরি ফুলের দেশ জাপানে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির চাপ আর বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে দেশটিতে হোটেল ভাড়া বেড়ে গেছে। এতে এ বছর স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ভ্রমণপিপাসু জাপানিরা এবার যেন ব্যাগ গোছাতেই আগ্রহ পাচ্ছেন না। টোকিও থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

গোল্ডেন উইক বা ওগন শুকান, জাপানের বড় ছুটিগুলোর একটি। প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত এই ছুটি থাকে দেশটিতে। এটি মূলত পরপর তিনটি সরকারি ছুটি নিয়ে গঠিত। প্রতিবছরই দীর্ঘ এ অবকাশ যাপনে জাপান জুড়ে ভ্রমণের সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু এবারের চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। কারণ, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির নাগরিকরা এবছর তীব্র দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মুখোমুখি। সবজি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিল পর্যন্ত সবকিছুর জন্যই বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে তাদের। 

একদিকে, ২০২২ সালের পর থেকে জাপানি মুদ্রা ইয়েন প্রায় এক তৃতীয়াংশ মূল্য হারিয়েছে। অন্যদিকে, বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। ডেইলি নিক্কির জরিপ থেকে জানা যায়, বিদেশি পর্যটকদের আগমনে হোটেল বুকিংয়ের চাহিদা বেড়েছে। ফলে, জাপানের পাঁচটি প্রধান শহরে গত বছরের তুলনায় গোল্ডেন উইকের শুরুতে রুমের ভাড়া প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে গেছে।

সব কিছু মিলিয়ে, এ বছর গোল্ডেন উইকের ঘোরাঘুরি বা ভ্রমণে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে জাপানিদের মনে। এবার ছুটি শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার। ইয়ামানশি ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম স্টাডিজের অধ্যাপক আতুশি তানাকা এএফপিকে জানান, দেশি পর্যটকদের ভ্রমণে অনীহার সবচেয়ে বড় কারণ মুদ্রাস্ফীতি বলে মনে হচ্ছে। যা তাদের হাতখুলে খরচ করার ইচ্ছাকে কমিয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন,"যেহেতু বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি, তাই হোটেল মালিকরা ভাড়া কমানোর প্রয়োজনবোধ করছেন না। এটি স্থানীয়দের জন্য ভ্রমণ করাকে কঠিন করে তুলছে।’’

সম্প্রতি ভ্রমণ সংস্থা জেটিবির জরিপে দেখা যায়, ২০.৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলছেন যে, গোল্ডেন উইকে ভ্রমণে যাবেন, বা "সম্ভবত" যাবেন। তবে এই সংখ্যা যা গত বছরের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ কম। অন্যদিকে বিপণন গবেষণা সংস্থা ইন্টেজের জরিপ বলছে, এবছর ছুটিতে ১৩.৬ শতাংশ জাপানি দেশের পর্যটন স্থানগুলো  ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। যা আগের বছরের আগের তুলনায় ২ শতাংশ কম। তবে, ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে চলার ইচ্ছার মতো কারণও উঠে এসেছে জরিপটিতে। ইন্টেজের তথ্য বলছে, “আর্থিক চাপের কারণে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার প্রবণতা” বাড়ছে। আর বিদেশ ভ্রমণ অনেক জাপানির কাছে পূরণ করতে না পারা বিলাসিতার পর্যায়ের।

তবে একই গবেষণায় দেখা গেছে, এ বছর গোল্ডেন উইকের ভ্রমণের জন্য গড় বাজেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১ ডলারে। ইন্টেজের মোতোহিরো শিমোগাওর্ াবেলেন, “এটি প্রমাণ করে যে অনেকেই এই বাড়তি  খরচকে মেনে নিয়েছেন”।

গত বছর জাপানে ৩৬.৮ মিলিয়নেরও বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণের রেকর্ড রয়েছে। যা ২০১৯ সালের প্রায় ৩২ মিলিয়নের রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। দেশটির সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৬০ মিলিয়ন পর্যটক আকৃষ্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বিশ্বের খ্যাতনামা পর্যটন কেন্দ্র ইতালির ভেনিসের মত করে জাপানিদের কাছ থেকে বিদেশি পর্যটকের আধিক্য বিষয়ে বিরোধিতা বাড়ছে।

তবে, কিওটো থেকে শুরু করে মাউন্ট ফুজির আশেপাশের শহরগুলোতে দিন দিন অতিরিক্ত ভিড়, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং কিছু পর্যটকের খারাপ আচরণের মত ঘটনা বাড়ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে।