বাসস
  ০২ মে ২০২৫, ১৯:৩২

ব্রিটিশ রাজনীতিতে রিফর্ম ঝড় : লেবার ঘাঁটি ভেঙে স্টারমারকে চমক

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টির কাছ থেকে একটি পার্লামেন্টারি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে কট্টর-ডানপন্থী রিফর্ম ইউকে। শুক্রবারের এ ফলাফল ব্রিটেনের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের জন্যই একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের রানকর্ন থেকে এএফপি জানায়, অভিবাসনবিরোধী নেতা নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন রিফর্ম ইউকে উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের রানকর্ন ও হেলসবির উপ-নির্বাচনে মাত্র ছয় ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়। এ ছাড়া দলটি আরও কয়েকটি এলাকায় বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে, এমন কি একটি মেয়র পদও জিতেছে।

লেবার পার্টির অন্যতম নিরাপদ আসনে এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে রিফর্ম ইউকে আগের সাধারণ নির্বাচনে অর্জিত গতি বজায় রাখল এবং যুক্তরাজ্যে বহু-দলীয় রাজনীতির নতুন যুগ শুরু হওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট করল।

ব্রেক্সিটপন্থী ফারাজ বলেন, এই প্রথমবারের মতো উপ-নির্বাচনে জয় এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর স্টারমারের প্রথম নির্বাচনী পরাজয় প্রমাণ করে, এখন রিফর্ম-ই দেশের প্রধান বিরোধী দল।

তিনি বলেন, ‘এটি লেবার পার্টির হৃদয়ভূমি। তাদের ভোট ভেঙে পড়েছে, আর তার একটি বড় অংশ আমাদের কাছে এসেছে। এটি প্রমাণ করে যে এটি কেবল আমাদের বনাম কনজারভেটিভ বিষয় নয়, বরং রাজনীতির একেবারে ভিন্ন একটি অধ্যায় শুরু হয়েছে।’

লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলের কাছ থেকে রিফর্ম ইউকে অনেকগুলো কাউন্সিল আসনও ছিনিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থায় ভাঙন ধরার ইঙ্গিত মিলেছে এই নির্বাচনে।

ছয়টি মেয়র পদে লড়াইয়ে রিফর্ম জয় পেয়েছে গ্রেটার লিংকনশায়ারে। লেবার তিনটি মেয়র পদ ধরে রাখতে পারলেও নর্থ টাইনসাইডে ২৬ শতাংশ ভোটের সুইং সত্ত্বেও খুব অল্প ব্যবধানে জিতেছে।

গ্রেটার লিংকনশায়ারের নতুন মেয়র আন্দ্রেয়া জেনকিনস বলেন, ‘আমাদের মহান দেশের হৃদয় ও আত্মাকে বাঁচানোর লড়াই এখন শুরু হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘রিফর্ম এখন ক্ষমতায়, এখন আমরা ব্রিটেন পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারব, ধাপে ধাপে।’

রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট

এই উপনির্বাচনে জয় পেয়ে পার্লামেন্টে রিফর্ম ইউকের আসন দাঁড়াল পাঁচটি- যুক্তরাজ্যের জন্য কট্টর ডানপন্থী কোনো দলের পক্ষে এটি নজিরবিহীন ঘটনা।

এটি ছিল স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন। গত বছর বিরোধী কনজারভেটিভ দলের হাল ধরেছেন কেমি বাদেনোখ।

২৩টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে মাত্র ১,৬৪১টি আসন নিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা ইংল্যান্ডের মোট ১৭ হাজার কাউন্সিলর পদের এক ক্ষুদ্রাংশ। তবে প্রাথমিক ফলাফল বলছে, জাতীয় জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা রিফর্ম ইউকে ব্যালটেও ফল আনতে শুরু করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জন কার্টিস বিবিসিকে বলেন, ‘এই নির্বাচনের পর মূল প্রশ্ন ছিল—রিফর্ম কি সত্যিই কনজারভেটিভ ও লেবার উভয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে? এখন পর্যন্ত তার উত্তর নিঃসন্দেহে হ্যাঁ।’

সেন্টারিস্ট লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও বামপন্থী গ্রিন পার্টিও কিছু অগ্রগতির আশা করছে, কারণ জরিপ বলছে- জনগণ দুই প্রধান দলের প্রতি ক্রমেই বিমুখ হয়ে পড়ছে। এর পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, অনিয়মিত অভিবাসনের হার বৃদ্ধি এবং জনসেবা খাতে দুর্বলতা।

‘ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অবৈধ অভিবাসন’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া রিফর্ম ইউকে আশা করছে, এ ধরনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদের জয়ে তাদের তৃণমূল সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে এবং ২০২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবে।

বিগত শতাব্দীর গোড়া থেকে ব্রিটিশ রাজনীতিতে লেবার ও কনজারভেটিভদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। তবে এখন রাজনৈতিক কাঠামো ‘ভেঙে পড়ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন কার্টিস।

রিফর্মের দিকে ভোটঘূর্ণি

গত বছরের নির্বাচনে মাত্র ৩৩.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী হয় লেবার পার্টি- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো বিজয়ী দলের পক্ষে এটিই সবচেয়ে কম ভোট শতাংশ।

১৪ বছর পর ক্ষমতা হারানো কনজারভেটিভ পেয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ ভোট, পায় ১২১টি আসন। লিবারেল ডেমোক্র্যাট পায় ৭২টি এবং রিফর্ম ইউকে পায় ৫টি আসন।

রানকর্ন ও হেলসবির উপনির্বাচন হয় লেবার এমপি মাইক অ্যামসবেরি এক ব্যক্তিকে রাস্তায় ঘুষি মারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়।

স্থানীয় সময় সকাল ৬টার কিছু আগে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, রিফর্ম প্রার্থী সারা পোচিন পেয়েছেন ১২,৬৪৫ ভোট, আর লেবার প্রার্থী ক্যারেন শোর পেয়েছেন ১২,৬৩৯ ভোট- মাত্র ৬ ভোটের ব্যবধান।

গত নির্বাচনে লেবার পেয়েছিল ৫৩ শতাংশ ভোট, আর রিফর্ম পেয়েছিল মাত্র ১৮ শতাংশ- এই ফলাফল তাই ১৭ শতাংশ ভোটঘূর্ণির ইঙ্গিত দেয়।

এক লেবার এমপি বলেন, ফলাফল প্রমাণ করে দলের ‘পথ পরিবর্তন করতে হবে।’

ব্রায়ান লাইশম্যান এক্স-এ লিখেছেন, ‘প্রথম ১০ মাসে আমরা যথেষ্ট ভালো করিনি... যদি মানুষের জীবনমানের উন্নতি না হয়, তাহলে পরবর্তী সরকার হবে একটি কট্টর ডানপন্থী সরকার।’