শিরোনাম
ঢাকা, ২ মে ২০২৫ (বাসস): ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার থেকে চার দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন শুরু করছে যুক্তরাজ্য। ‘গ্রেটেস্ট জেনারেশন’-এর বিলুপ্তি এবং বিশ্বজুড়ে নতুন অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এবারের অনুষ্ঠানগুলো পাচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব ও আবেগ।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, সারা ইউরোপজুড়ে বিজয় দিবস উদ্যাপিত হবে ৮ মে—১৯৪৫ সালের এই দিনে নাৎসি জার্মানি আত্মসমর্পণ করে।
এই উৎসবের সূচনা হবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অংশগ্রহণে। সোমবার তারা একটি সামরিক কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করবেন এবং বাকিংহাম প্যালেসে প্রবীণ যুদ্ধপ্রত্যাগতদের জন্য একটি চা-চক্রে যোগ দেবেন।
রাজা চার্লস তৃতীয়, রানী কামিলা, সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন এবং প্রাচীন ও আধুনিক উড়োজাহাজের একটি ফ্লাইপাস্ট দেখবেন প্যালেসের বারান্দা থেকে। হাজার হাজার মানুষ এই দৃশ্য দেখার জন্য রাস্তার দু’পাশে ভিড় করবেন।
গত বছর রাজা চার্লস ও প্রিন্সেস ক্যাথরিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানান, তবে এখন তাঁরা সীমিত সময়ের জন্য রাজকীয় দায়িত্বে ফিরেছেন।
এটাই সম্ভবত শেষ বড় ধরনের যুদ্ধস্মরণ অনুষ্ঠান, যেখানে যথেষ্ট সংখ্যক প্রবীণ যোদ্ধা অংশ নিচ্ছেন। লন্ডনের সেনোটাফ যুদ্ধস্মারকে জাতীয় পতাকা উড়বে, যেখানে ব্রিটেনের যুদ্ধে নিহতদের স্মরণ করা হয়।
৯৯ বছর বয়সী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রয়্যাল এয়ার ফোর্স ভেটেরান ডেনিস বিশপ এএফপিকে বলেন, 'যারা ফিরে আসেননি, সেই দুর্ভাগা মানুষগুলোর কথা স্মরণ করাটা আমার জন্য জরুরি।' তিনি নতুন প্রজন্মকে 'সবাইকে বন্ধু হিসেবে দেখে বড় হওয়ার' আহ্বান জানান।
সারা দেশে স্ট্রিট পার্টি অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে একটি হবে বিখ্যাত যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস বেলফাস্টে, যা এখন লন্ডনের টেমস নদীতে নোঙর করা আছে।
পরবর্তী তিন দিনে থাকবে টাওয়ার অফ লন্ডনে প্রায় ৩০,০০০ সিরামিক পপি ফুলের প্রদর্শনী। উৎসব শেষ হবে ৮ মে—ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে জাতীয় মৌনতা ও স্মরণানুষ্ঠানের মাধ্যমে। রাতে হর্স গার্ডস প্যারেডে একটি নস্টালজিক কনসার্ট হবে, যেখানে গাইবেন পপ শিল্পী, থাকবেন অভিনেতা ও সামরিক ব্যান্ড।
এই আত্মসমর্পণের পরেই প্রকাশ পায় নাৎসি শাসনের ভয়াবহতা—৬০ লাখ ইহুদি হত্যার কথা, যা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে পরিচিত।
- রাশিয়ার অনুপস্থিতি -
ঐতিহাসিক বিজয় দিবস সাধারণত উদ্যাপনের উপলক্ষ হলেও এবারের আয়োজনের আবহ রঙিন করছে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও যুদ্ধপ্রজন্মের বিদায়।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ডেভিড রেনল্ডস এএফপিকে বলেন, 'সব ইতিহাসই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে তার সময় ও পরিবেশের প্রেক্ষাপটে।'
রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনে তিন বছরের যুদ্ধে এই প্রেক্ষাপট আরও ঘনীভূত হয়েছে।
নতুন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জ-সহ ইউরোপীয় নেতারা দৃঢ় অবস্থান দেখাতে চাইছেন, বিশেষত এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের অবিচল সমর্থনের ওপর ইউরোপের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রেনল্ডস বলেন, 'পরাজিত শত্রু জার্মানি এখন মিত্র... এবং ন্যাটোর ইতিহাসে এই প্রথমবার তারা জোটের প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে বড় ভূমিকা নিতে যাচ্ছে। এতে এক ধরনের ব্যঙ্গাত্মক অনুভূতি জাগে।'
জার্মানিতে এবার ব্যতিক্রমীভাবে ৮ মে সরকারি ছুটি হিসেবে পালন করা হবে। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার এক স্মরণানুষ্ঠানে অংশ নেবেন কাইজার উইলহেলম মেমোরিয়াল চার্চে, যেটি মিত্র বাহিনীর বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পরবর্তীতে জার্মান পার্লামেন্টে একটি স্মরণানুষ্ঠান হবে, যেখানে রাশিয়া ও বেলারুশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
- ‘শান্তির জন্য লড়াই করতে হয়’ -
রাশিয়া ৯ মে তার 'বিজয় দিবস' উদ্যাপন করবে মস্কোর রেড স্কয়ারে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে, যার নেতৃত্ব দেবেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও ব্রাজিলের লুইজ ইনায়সিও লুলা দা সিলভা-সহ প্রায় ২০ জন বিদেশি নেতা এতে অংশ নেবেন।
পুতিন এই দিবসকে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়কে ২০২২ সালের ইউক্রেন আগ্রাসনের নৈতিক ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ৮ মে আর্ক দ্য ত্রিয়ঁফ-এ এক জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, সেখানে তিনি অজ্ঞাতনামা যোদ্ধার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শিখা পুনঃপ্রজ্বলন করবেন।
প্রতি বছর প্রবীণ যোদ্ধাদের সংখ্যা কমে আসায় এখন এই অনুষ্ঠানগুলোর মূল উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে পরবর্তী প্রজন্মকে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া, বলেন রেনল্ডস, যিনি ‘মিররস অব গ্রেটনেস: চার্চিল অ্যান্ড দ্য লিডারস হু শেইপড হিম’ বইয়ের লেখক।
তিনি বলেন, 'আমরা ধরে নিতে পারি না যে শান্তিই এই বিশ্বের স্বাভাবিক অবস্থা... শান্তি অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে হয়, এটাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষা।'
রাজা চার্লস গত মাসে ইতালির পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে একই বার্তা দেন: 'শান্তিকে কখনোই নিশ্চিত ধরে নেওয়া উচিত নয়।'