শিরোনাম
ঢাকা, ২ মে, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ‘উদ্বেগজনক অবনতি’ ঘটেছে বলে শুক্রবার সতর্ক করেছে গণমাধ্যম অধিকার সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্স’ (আরএসএফ)। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকদের জন্য পরিস্থিতিকে ‘অভূতপূর্বরকম’ কঠিন বলে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, প্যারিসভিত্তিক সংগঠনটি গত ২৩ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, সূচকটি এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে।
বছরব্যাপী বৈশ্বিক গণমাধ্যম পরিস্থিতির এই পর্যালোচনায় বলা হয়, 'সূচকের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্বের অর্ধেক দেশে সাংবাদিকতা চর্চার পরিস্থিতি ‘খারাপ’ এবং প্রতি চারটির মধ্যে মাত্র একটিতে তা ‘সন্তোষজনক’।'
আরএসএফ-এর সম্পাদকীয় পরিচালক অ্যান বোকান্দে বলেন, সাংবাদিকতা-নির্ভর সত্যভিত্তিক প্রতিবেদন আজ অর্থনৈতিক চাপে দুর্বল হয়ে পড়েছে। অর্থাভাবে অনেক স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
২০২৪ সালে অনলাইন বিজ্ঞাপনে ব্যয় বেড়ে ২৪৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছালেও এর বড় অংশই চলে যাচ্ছে ফেসবুক, গুগল ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের পকেটে— গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কাছে নয়।
বোকান্দে বলেন, 'যখন সাংবাদিকরা দারিদ্র্েযর মধ্যে পড়েন, তখন তারা সংবাদমাধ্যমবিরোধী শক্তির—বিভ্রান্তিকর তথ্য ও প্রোপাগান্ডার—প্রতিরোধ করতে পারেন না।'
‘সরাসরি কর্তৃত্ববাদী ধাঁচে’
আরএসএফ-এর মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিল থেকে ভয়েস অব আমেরিকা ও রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি (আরএফই/আরএল)-এর মতো রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমগুলোর সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে। তাছাড়া, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার অংশ হিসেবে বিদেশের গণমাধ্যমগুলোকে দেওয়া সহযোগিতাও হ্রাস পেয়েছে।
২০২৪ সালে ১১ ধাপ নিচে নামার পর যুক্তরাষ্ট্র এ বছর আরও দুই ধাপ পিছিয়ে ৫৭তম অবস্থানে নেমে এসেছে। আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিয়েরা লিওনও ট্রাম্পর দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
এই সূচক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সংখ্যা এবং বিশেষজ্ঞদের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। নরওয়ে টানা নবমবারের মতো শীর্ষস্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে এস্তোনিয়া ও নেদারল্যান্ডস।
আরএসএফ বলেছে, 'যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় যে অবনতি ঘটেছে, তা কর্তৃত্ববাদী ধাঁচের শাসনের ইঙ্গিত দেয়।'
'তার প্রশাসন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমে সহযোগিতা কমিয়েছে এবং সাংবাদিকদের প্রান্তিক করে রেখেছে।”
আরএসএফ-এর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলাকাই এখন ‘সংবাদের মরুভূমি’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা দেন, তিনি নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন। এটি তার সর্বশেষ গণমাধ্যমবিরোধী উদ্যোগ।
তিনি একইসঙ্গে মিডিয়া প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট-এর বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। মামলাটি গত বছরের নির্বাচনের আগে সিবিএস চ্যানেলে তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে।
ট্রাম্প দাবি করেন, সেখানে তার বিব্রতকর একটি উত্তর ইচ্ছাকৃতভাবে কেটে ফেলা হয়েছিল। তবে বহু আইনি বিশ্লেষক মনে করেন, মামলাটি সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষার কারণে বাতিল হয়ে যেতে পারে কিংবা টিকবে না।
গণমাধ্যম পর্যবেক্ষক সংস্থা সিপিজে (কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস) বুধবার জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ‘ক্ষীয়মাণ’ এবং সংবাদমাধ্যমগুলোকে সম্মিলিতভাবে ‘উঠে আসা হুমকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর’ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
গত এক বছরে গণমাধ্যম স্বাধীনতায় বড় ধরনের অবনতির শিকার হওয়া অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা (২১ ধাপ নিচে নেমে ৮৭তম)—যেখানে ট্রাম্পের মিত্র খ্যাত দক্ষিণপন্থি নেতা হাভিয়ের মিলেই ক্ষমতায়। আর তিউনিসিয়া নেমে এসেছে ১১ ধাপ পিছিয়ে ১২৯তম অবস্থানে।
আরএসএফ আবারও গাজায় ইসরাইলি হামলার সময় ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের দুর্দশার বিষয়টি তুলে ধরে বলে, 'গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী সাংবাদিকদের নিউজরুম ধ্বংস করেছে, প্রায় ২০০ সাংবাদিককে হত্যা করেছে এবং গত ১৮ মাস ধরে অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ রেখেছে।'
ইসরাইল এবার আরও ১১ ধাপ নেমে ১১২তম অবস্থানে পৌঁছেছে এবং ‘নিজ দেশের সংবাদমাধ্যমকে দমন’ অব্যাহত রেখেছে বলেও মন্তব্য করে আরএসএফ।