বাসস
  ০২ মে ২০২৫, ১১:৪৫
আপডেট : ০২ মে ২০২৫, ১২:৩৩

মার্কিন খনিজ চুক্তি ‘সত্যিই সমান’: জেলেনস্কি

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক খনিজসম্পদ চুক্তিটি উভয়পক্ষের জন্যই ‘সমান' লাভজনক। যদিও এতে কিয়েভের জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিরাপত্তা গ্যারান্টি নেই।

কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, চুক্তির পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলের শিল্পনগরী জাপোরিঝিয়ায় বড় আকারের ড্রোন হামলা চালায়। সোভিয়েত আমলের একটি আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১৪ জনকে আহত করে। এর আগেই মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি।

মাসের পর মাস ধরে আলোচনার পর এই চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়, যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন যৌথভাবে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ উন্নয়ন ও বিনিয়োগে অংশ নেবে।

নিজ বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, আলোচনার প্রক্রিয়ায় চুক্তিটির কাঠামো ‘গুরুত্বপূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে’।

'এটি এখন সত্যিকার অর্থেই একটি সমতাভিত্তিক চুক্তি, যা ইউক্রেনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এই চুক্তিতে কোনো ঋণ নেই; বরং একটি পুনর্গঠন তহবিল গঠিত হবে, যা ইউক্রেনে বিনিয়োগ করবে এবং এখান থেকেই আয় করবে।'

চুক্তিটি ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরের কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতবিরোধের কারণে তা বিলম্বিত হয়।

ইউক্রেনের আশা, এই চুক্তিটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা গ্যারান্টি পাওয়ার পথ সুগম করবে।

চুক্তিটি এখনো ইউক্রেনের সংসদে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ট্রাম্প চুক্তিটিকে প্রথমে ইউক্রেনের জন্য 'যুদ্ধকালীন সহায়তার বিনিময়ে অর্থ ফেরত পাওয়ার উদ্যোগ' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

তবে ইউক্রেন বলছে, এটি অতীতের কোনো ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। মার্কিন কর্মকর্তারাও একে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

‘শান্ত হোন এবং আলোচনা করুন'

চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন যৌথভাবে একটি ‘পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল’ গঠন করবে। কিয়েভ জানায়, প্রথম ১০ বছর তহবিল থেকে অর্জিত মুনাফা শুধুমাত্র ইউক্রেনে পুনঃবিনিয়োগ
করা হবে, এরপর তা দুই পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হতে পারে।

চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি দেয় না, তবে ওয়াশিংটনের মতে, ইউক্রেনে ব্যবসায়িক আগ্রহ বৃদ্ধি রাশিয়াকে প্রতিহত করতে সহায়ক হবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের মিত্রদের উচিত 'রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানো যাতে তারা শান্ত হয়ে আলোচনায় বসে।'

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বৃহস্পতিবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে আলোচনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৭ নিষেধাজ্ঞা প্রস্তুত করছে। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার 'একক বাধা' বলে বর্ণনা করেন।

গত মাসে রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও ডেমোক্র্যাট রিচার্ড ব্লুমেনথালের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের একদল দুই-দলীয় সিনেটর প্রস্তাব দেন, যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হলে রাশিয়ার মিত্র দেশগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

তবে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও, রাশিয়া হামলা অব্যাহত রেখেছে। মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মস্কো, পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি তোলে।

যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, এই সপ্তাহটি সিদ্ধান্তমূলক—তারা শান্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে কি না তা নির্ভর করবে চলমান অগ্রগতির ওপর।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে বলেন, তিনি যুদ্ধবিরতি অর্জনের বিষয়ে 'আশাবাদী' তবে শেষ সিদ্ধান্ত কিয়েভ ও মস্কোর ওপর নির্ভর করছে।

'তাদেরই শেষ পদক্ষেপ নিতে হবে,' তিনি ফক্স নিউজে প্রচারিত সংবাদে বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, 'শান্তি প্রক্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসতে পারে,: কারণ 'বিশ্বে এমন অনেক বিষয় ঘটছে—আমি বলব আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—যা আমাদের মনোযোগ দাবি করে।'

তিনি বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজে বলেন, 'আমি বলব, চীনের সঙ্গে যা ঘটছে, তা দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ।'

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত তিন দিনের আকস্মিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। দিনগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় দিবসের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করবে মস্কো।