বাসস
  ০২ মে ২০২৫, ১০:৪৫

সিরিয়ায় দ্রুজদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার অভিযান’ চলছে: শায়খ হিকমাত

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২ মে, ২০২৫ (বাসস): সিরিয়ায় দুই দিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ১০২ জন নিহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দেশটির দ্রুজ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ হিকমাত আল-হিজরি একে ‘অন্যায্য গণহত্যা অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ দ্রুজদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে ‘গুরুত্বপূর্ণ শক্তি প্রয়োগে’ হুঁশিয়ার করেছে ইসরাইল।

দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘যদি সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুজদের রক্ষা করতে না পারে, তবে ইসরাইল চুপ করে থাকবে না।’

দামেস্ক থেকে এএফপি জানায়, গত ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইসলামপন্থি নতুন প্রশাসনের জন্য এটি এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

মার্চ মাসে সিরিয়ার আলাওয়ি-প্রধান উপকূলীয় অঞ্চলে সামরিক বাহিনী ও তাদের মিত্রদের হাতে প্রায় ১,৭০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়—এদের বেশিরভাগই ছিলেন আসাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ভুক্ত।

দ্রুজ নেতা হিজরি বলেন, দামেস্কের নিকটবর্তী জারামানা ও সাহনায়ায় সম্প্রতি যা ঘটেছে, তা ‘সম্পূর্ণভাবে অবিচারপূর্ণ এবং গণহত্যামূলক একটি অভিযান’। তিনি বলেন, ‘এই অপরাধের ধারাবাহিকতা ঠেকাতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

ইসরাইল ইতোমধ্যে সিরিয়ার দ্রুজদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সিরিয়ার সংখ্যালঘু, বিশেষ করে দ্রুজদের রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখা।’

সুইদা শহরে বৃহস্পতিবার দ্রুজ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলোর এক বৈঠকে জানানো হয়, ‘আমরা সিরিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভাজন, বিচ্ছিন্নতা বা সরে যাওয়া আমরা প্রত্যাখ্যান করি।’

‘বেআইনি গোষ্ঠী’ দায়ী: সরকার

ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সংঘর্ষে অংশ নেয় সরকারি বাহিনী, মিত্র যোদ্ধা ও স্থানীয় দ্রুজ গোষ্ঠীগুলো। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৩০ জন সরকারপন্থি যোদ্ধা, ২১ জন দ্রুজ যোদ্ধা ও ১০ জন বেসামরিক নাগরিক, যাঁদের মধ্যে সাহনায়ার সাবেক মেয়র হুসাম ওয়ারওয়ারও রয়েছেন।

দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজ-প্রধান প্রদেশ সুইদায় আরও ৪০ জন দ্রুজ যোদ্ধা নিহত হন। এর মধ্যে ৩৫ জন বুধবার সুইদা-দামেস্ক সড়কে একটি ‘অতর্কিত হামলায়’ প্রাণ হারান। পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি জানায়, হামলাটি চালায় স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বাহিনী এবং তাদের সঙ্গে থাকা বন্দুকধারীরা।

এই সহিংসতার সূত্রপাত একটি ‘ধর্মনিন্দাসূচক’ অডিও ক্লিপ ঘিরে, যার উৎস নিশ্চিত করতে পারেনি এএফপি।

মঙ্গলবার জারামানায় এবং বুধবার সাহনায়ায় যুদ্ধবিরতি হলেও সরকার সাহনায়ায় নতুন করে বাহিনী মোতায়েন করে এবং সংঘর্ষের জন্য ‘বেআইনি গোষ্ঠী’কে দায়ী করে।

সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা

শায়খ হিজরি বলেন, ‘যে সরকার নিজ জনগণকে উগ্র মিলিশিয়ার মাধ্যমে হত্যা করে এবং পরে বলে, তারা নাকি বিক্ষিপ্ত অপরাধী—তাদের আর বিশ্বাস করা যায় না।’ তিনি বলেন, প্রকৃত সরকার ‘নিজের জনগণকে রক্ষা করে’।

দ্রুজ নেতৃবৃন্দের জোট সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, তারা যেন সুইদা প্রদেশের নিজস্ব জনগণের মধ্য থেকে বিচারিক পুলিশ নিযুক্ত করে।

বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান

সরকারি সূত্র মতে, নতুন শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ভিত্তি আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট, যদিও তারা বলছে—দেশে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত সম্প্রীতির ভিত্তিতে শাসনব্যবস্থা চালু থাকবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শায়বানী বৃহস্পতিবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ‘জাতীয় ঐক্যই স্থিতিশীলতা ও পুনর্জাগরণের ভিত্তি। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের ডাক আরও অবনতি ও বিভাজন ডেকে আনে।’

ইসরাইলি হামলা ও সহায়তা

বুধবার ইসরাইল দামেস্কের নিকটবর্তী এলাকায় বিমান হামলা চালায়। ২০১১ সালের পর থেকে ইসরাইল শত শতবার সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এবার তারা স্পষ্টভাবে জানায়, দ্রুজদের ওপর সহিংসতা বন্ধ না হলে সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত থাকবে।

ইসরাইল জানায়, বৃহস্পতিবার তারা আহত দুই সিরীয় দ্রুজকে চিকিৎসার জন্য তাদের উত্তরাঞ্চলে সরিয়ে নিয়েছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানান।