শিরোনাম
ঢাকা, ২ মে, ২০২৫ (বাসস) : মূল্যবান মৃত্তিকা খনিজ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুনভাবে নিজেদের সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে ইউক্রেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তনশীল অবস্থানের কারণে দীর্ঘমেয়াদে এর কতটা সুফল মিলবে—সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, দুই মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডার পর হোয়াইট হাউস থেকে বিতাড়িত হন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তখন যে চুক্তিটি সই হওয়ার কথা ছিল, তা পুনরায় আলোচনা করে এখন একটি ‘সমমর্যাদার ভিত্তিতে’ সম্পাদন করা হয়েছে বলে দাবি করেন জেলেনস্কি।
যদিও ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদে সমর্থন দেবেন না। বরং এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘লাল রেখা’র অবস্থানকে সমর্থন করছেন তিনি। এছাড়া ২০২২ সালের রুশ আগ্রাসনের পর ইউক্রেনকে দেওয়া বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তাও তিনি বারবার সমালোচনা করেছেন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, আগের সহায়তার বিপরীতে ‘মূল্য চাওয়া’র চাপ উপেক্ষা করে ইউক্রেন এমন একটি অর্থনৈতিক ভিত্তির চুক্তি করেছে, যা ট্রাম্পের ব্যবসায়িক মানসিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া সেন্টারের উপপরিচালক শেলবি ম্যাগিড বলেন, ‘এই চুক্তির ফলে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেন প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটনের সঙ্গে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘আগের তুলনায় এবার ইউক্রেন দেখিয়েছে যে, তারা কেবল অনুগত কিশোর নয়, যারা খারাপ চুক্তি মেনে নেয়।’
চুক্তিতে ইউক্রেনের কোনো ঋণের উল্লেখ নেই, যদিও ট্রাম্প শাসনামলে আগের সহায়তার জন্য প্রতিদান দাবি করেছিলেন।
‘চাঁদাবাজি’?
তবে ইতিহাস কিছুটা হতাশাজনক ইঙ্গিতও দেয়। ট্রাম্প ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে দেশটির খনিজ সম্পদ উন্নয়নে চুক্তি করেন। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে তালেবানদের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করে দেন তিনি। এতে ঘানির সরকার পড়ে যায় কোণঠাসা অবস্থায়, এবং শেষ পর্যন্ত তালেবান ক্ষমতা দখল করে।
এই চুক্তিকে ‘চাঁদাবাজি’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস। আর সিনেটর ক্রিস মারফি বলেন, ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা না দেন, তবে ‘এই চুক্তি কাগজে লেখা অর্থহীন এক প্রতিশ্রুতিমাত্র’।
নিরাপত্তা প্রশ্নে অনিশ্চয়তা
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিশ্লেষক রবার্ট মারেটের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ সংযুক্ত করেছে—এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে এটি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় কিনা, তা এখনই বলা কঠিন।
ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসলিন বাসকারান বলেন, ‘মাত্র দুই মাস আগের সংঘর্ষের পর, এই চুক্তিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়টি উল্লেখ করাই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি এতে আবার মার্কিন সামরিক সহায়তার ইঙ্গিতও রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি হতে পারে। এবং তাৎক্ষণিকভাবে এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার একটি পথও তৈরি করেছে।’
তিনি মন্তব্য করেন, ‘এই অবস্থান, ৬০ দিন আগের তুলনায় একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।’