শিরোনাম
ঢাকা, ২ মে, ২০২৫ (বাসস): চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে সংকুচিত হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাবে আমদানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়াই এর মূল কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর জন্য পুরো দায় চাপিয়েছেন তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের ওপর।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ব্যাপকহারে শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে বিদেশি পণ্য মজুদ করতে গিয়ে আমদানি বেড়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অর্থনীতির এই অবস্থায় ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি প্রধান সূচকই পতনের মুখে পড়ে, নাসডাক সূচক পড়ে যায় দুই শতাংশের বেশি। একইসঙ্গে তেলের দামও নিম্নমুখী হয়।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, 'এটা বাইডেনের অবদান, ট্রাম্পের নয়।' তবে তিনি জিডিপির ভেতরে ২২ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে উল্লেখ করেন।
জো বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশের ওপরে ছিল, ২০২৪ সালে যা দাঁড়ায় ২.৮ শতাংশে।
তবে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বার্ষিক হিসাবে ০.৩ শতাংশ হারে কমেছে। আগের প্রান্তিকে এটি ছিল ২.৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের প্রাথমিক হিসেবে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্লেষকরা ০.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও তা না হয়ে উল্টো সংকোচন হয়। এটি ২০২২ সালের পর প্রথম কোনো প্রান্তিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
বাণিজ্য দপ্তর বলেছে, ভোক্তা ও সরকারি ব্যয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এই সংকোচনের সৃষ্টি হয়েছে।
‘উচ্চস্বরের সতর্কবার্তা’ -
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, জিডিপি হচ্ছে ‘অতীতমুখী সূচক’। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, 'বাইডেন প্রশাসনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অবশিষ্ট প্রভাবই এখনও প্রবৃদ্ধিকে টেনে ধরছে। তবে প্রকৃত চিত্র দেখায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে অর্থনীতির ইতিবাচক গতি।'
জিডিপি সংকোচনের এই তথ্য প্রকাশিত হয় ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ১০১তম দিনে।
এদিকে সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট চাক শুমার বলেন, 'এই প্রবৃদ্ধি হ্রাস আসলে উচ্চস্বরে সতর্কবার্তা, যে ট্রাম্প ও কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের ব্যর্থ ‘ম্যাগা’ নীতিই অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে।'
‘মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে’ -
শুল্ক আরোপের পর এপ্রিলের শুরুর দিকেই বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের জন্য বহু দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়, যাতে আলোচনার সুযোগ থাকে। তবে বেশিরভাগ দেশের জন্য ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বজায় রাখা হয়।
একইসঙ্গে চীনের ওপর আরোপিত শুল্কের পরিমাণ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশে, কিছু খাতে যা আরও বেশি।
চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপরও নির্দিষ্ট খাতে কঠোর শুল্ক আরোপ করেছে।
বুধবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, 'চীন এখন শুল্কে জর্জরিত' এবং তিনি এখনো বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি চুক্তির আশা রাখছেন। তিনি চীনকে বলেন 'আমেরিকার সবচেয়ে বড় চোর'।
তিনি আরও বলেন, 'হয়তো এখন থেকে শিশুদের ৩০টা পুতুলের বদলে দুটো পুতুল থাকবে, আর হয়তো ওগুলো কয়েক ডলার বেশি দামি হবে।'
ওয়েলস ফারগোর অর্থনীতিবিদরা এক বিশ্লেষণে বলেন, 'মার্কিন অর্থনীতিতে এখন মন্দার ঝুঁকি আগের চেয়ে বেশি, তবে প্রথম প্রান্তিকে ০.৩ শতাংশ সংকোচন এর সূচনা নয়। বরং এটি মূলত আকস্মিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের প্রতিফলন।'