শিরোনাম
ঢাকা, ২ মে, ২০২৫ (বাসস): মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন যে, একটি চ্যাট গ্রুপে তথ্য ফাঁসের ঘটনায় তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজকে পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন। তবে ওয়াল্টজকেই জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেন, 'মাইক ওয়াল্টজ দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আমি জানি, নতুন দায়িত্বেও তিনি একই রকম কাজ করবেন।'
তিনি আরও জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও এখন থেকে ‘অন্তর্বর্তী’ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করবেন।
জাতিসংঘে মাইক ওয়াল্টজকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ এবং মার্কো রুবিওকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ‘অন্তর্বর্তী’ দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কৌশলগত ইঙ্গিত রয়েছে।
মাইক ওয়াল্টজ একজন সাবেক গ্রিন বেরেট ও কংগ্রেস সদস্য, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের জিওপলিটিকাল নিরাপত্তা কৌশলের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তার জাতিসংঘে নিয়োগ একটি বার্তা দেয় যে, ট্রাম্প তার কট্টর নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি এখন তিনি কূটনৈতিক অঙ্গনেও প্রয়োগ করতে চান।
ওয়াল্টজকে সরানোর কারণ হিসেবে চ্যাট গ্রুপে ফাঁস হওয়া তথ্যের কথা বলা হলেও, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরকার শক্তি ও অনুগতদের পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত হতে পারে। প্রশাসনের প্রতি ‘পূর্ণ আনুগত্য’ ট্রাম্পের কাছে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ।
রুবিও নিজে একজন জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান ও পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ। তাকে একইসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া প্রশাসনের কেন্দ্রীকরণ প্রবণতা ও অভ্যন্তরীণ আস্থা সংকটের দিক নির্দেশ করে। এতে করে আমলাতান্ত্রিক পর্যায়ে ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।
ওয়াল্টজের মতো একজন কট্টর জাতীয়তাবাদীকে জাতিসংঘে পাঠানো ট্রাম্পের বহুপক্ষীয় সহযোগিতার প্রতি সংশয়াত্মক মনোভাবকে তুলে ধরে। তার নিয়োগে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আরও স্বার্থকেন্দ্রিক ও একক অবস্থান নেওয়ার প্রবণতা দেখাতে পারে—বিশেষ করে চীন, ইরান বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে।
মাইক ওয়াল্টজ একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা (গ্রিন বেরেট) এবং কংগ্রেস সদস্য হিসেবে চীনের উত্থান, ইরান, সন্ত্রাসবাদ এবং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য নিয়ে কট্টর অবস্থান নিয়েছেন। তার বক্তব্যগুলোতে প্রায়শই জাতীয়তাবাদ, আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব এবং বহুপক্ষীয় কাঠামোর প্রতি সংশয় প্রকাশ পায়।
ওয়াল্টজ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার সময় চীনের প্রভাব রুখতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন—বিশেষ করে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল, ডব্লিউএইচও বা ইউএনডিপি-র মতো সংস্থায়।
তার অতীত অবস্থান থেকে ধরে নেওয়া যায় যে তিনি ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া সমর্থন বজায় রাখবেন এবং ফিলিস্তিন বিষয়ে জাতিসংঘের সমালোচনাকে বিরোধিতা করবেন।
ওয়াল্টজ জাতিসংঘের মতো প্ল্যাটফর্মকে প্রায়ই অকার্যকর বা পক্ষপাতদুষ্ট বলে বিবেচনা করেন। ফলে জলবায়ু চুক্তি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য, বা মানবিক অনুদানের মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আগ্রহ হারাতে পারে।
তিনি জাতিসংঘকে একটি নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চাইতে পারেন—যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্বে থাকা সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগগুলোকে বৈধতা দানে ব্যবহার করবে।
ওয়াল্টজের মতো একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একঘরে করতে পারে, বিশেষ করে ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে।
মানবাধিকার ও জলবায়ু ইস্যুতে সংঘাত
ওয়াল্টজ মানবাধিকার ইস্যুতে সিলেক্টিভ সমালোচনার পক্ষে এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সন্দেহবাদী মনোভাব পোষণ করেন, যা জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।