বাসস
  ০১ মে ২০২৫, ১৩:০৬

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি ‘আমরা প্রস্তুত, আমাদের পরীক্ষা নিও না’ 

ঢাকা, ১ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই উত্তেজনার মধ্যে যেকোনও ধরনের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

গতকাল বুধবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতকে উদ্দেশ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, ‘আমরা প্রস্তুত, আমাদের পরীক্ষা নিও না।’

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জাতিকে আশ্বস্ত করে বলেন, দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে এবং ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিতে সম্পূর্ণ সক্ষম।

তিনি বলেন, ‘আমরা আগ্রাসন শুরু করতে যাচ্ছি না। আমরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি রাষ্ট্র এবং আমরা সর্বদা যুক্তি এবং গঠনমূলক সম্পৃক্ততার পথ অনুসরণ করব। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে, আগ্রাসনই এগিয়ে যাওয়ার পথ, তাহলে আমাদের বার্তা কেবল এটাই, ‘আমরা প্রস্তুত, আমাদের পরীক্ষা নিও না।’

ডিজি আইএসপিআর আরও বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী—সবাই সর্বাত্মক প্রস্তুতিতে রয়েছে। আমরা সর্বত্র, সবসময় সক্রিয় আছি। যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত।’

তিনি স্পষ্ট করে জানান, যদি ভারত সামরিক সংঘাতের পথ বেছে নেয়, তাহলে সেটি হবে তাদের সিদ্ধান্ত; কিন্তু সংঘাত কোথায় গিয়ে থামবে, তা নির্ধারণ করবে পাকিস্তান।

তিনি জানান, প্রতিশোধমূলক জবাবের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ এবং জাতীয় নিরাপত্তা কমিটিও এই ইস্যুতে প্রয়োজনীয় বিবৃতি দিয়েছে।

জেনারেল চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সকল রাজনৈতিক দল ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিতে দৃঢ়সংকল্প। সেনাবাহিনী সব ফ্রন্টে প্রস্তুত রয়েছে—যে কোনো ধরনের হুমকির মোকাবিলায়।’

এদিকে কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর রাতভর তুমুল গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট ও কয়েকটি বাঙ্কার ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। বুধবার দেশটির সেনাবাহিনীর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ।

জিও নিউজ জানায়, ভারতীয় সেনারা বিনা উসকানিতে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করলে, পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। জবাবি হামলায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চকপুত্র পোস্টসহ একাধিক বাঙ্কার ‘কার্যকরভাবে ধ্বংস’ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

এ ঘটনা ঘটে এমন সময়, যখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে ওই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং তারা ভারতীয় চেকপোস্ট ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জিও নিউজ আরো জানায়, ভারতীয় সেনারা কিয়ানি ও মন্ডল সেক্টরে বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ করে। এর জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘উপযুক্ত ও পরিমিত প্রতিক্রিয়া’ দেখায় এবং ভারতীয় হুমকি প্রতিহত করে।

সেনাবাহিনীর একাধিক সূত্র বলেছে, পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়া দেশটির উচ্চমাত্রার অপারেশনাল প্রস্তুতির প্রমাণ দেয়। পাশাপাশি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারত নিজেদের ঘাঁটি খালি করছে এবং কাশ্মীরি মুসলমানদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা সূত্র বলছে, নয়াদিল্লির এই ধরনের উসকানিমূলক তৎপরতা একটি অস্থিতিশীল, যুদ্ধ-প্ররোচনামূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।