শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বুধবার ফিলিপাইন ও নিউজিল্যান্ড এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যার আওতায় দুই দেশ একে অপরের ভূখণ্ডে সৈন্য মোতায়েন করতে পারবে। চুক্তিটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ম্যানিলা থেকে এএফপি জানায়, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের মুখে ম্যানিলা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক ‘ভিজিটিং ফোর্সেস অ্যাগ্রিমেন্ট’ চূড়ান্ত করছে।
চীন এরই মধ্যে ওই কৌশলগত জলপথের প্রায় পুরোটা নিজের বলে দাবি করে নৌ ও উপকূলরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং ফিলিপাইনকে গুরুত্বপূর্ণ প্রবালদ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জগুলোর কাছাকাছি যেতে বাধা দিচ্ছে, যদিও আন্তর্জাতিক রায় চীনের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জুডিথ কলিন্স বলেন, এই চুক্তি আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকি উপলব্ধির ভিত্তিতে গৃহীত অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন, নিউজিল্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অগ্রসর করতে চায় এবং সেটা কেবল অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করেই সম্ভব।'
'আমরা সকলে উপলব্ধি করছি, আমরা যে কৌশলগত পরিবেশে কাজ করছি তা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে,' যোগ করেন কলিন্স।
ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিলবার্তো তেওদোরো বলেন, 'আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে যারা, এবং যারা সেটিকে পুনর্নির্ধারণ করতে চায়—দুই পক্ষই আছে।'
তিনি বিশেষভাবে চীনের ‘নাইন-ড্যাশ লাইন’ সমালোচনা করেন, যা ব্যবহার করে বেইজিং দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তৃত এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে।
তেওদোরো বলেন, 'এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণকে প্রতিহত করা প্রয়োজন।' তিনি আরও জানান, ম্যানিলা ও ওয়েলিংটন সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করবে।
ফিলিপাইন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে ভিজিটিং ফোর্সেস অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেছে। সংবাদ সম্মেলনে তেওদোরো জানান, কানাডার সঙ্গেও শিগগিরই অনুরূপ একটি চুক্তি সই হতে পারে।
— দায়িত্ব ভাগাভাগি —
মাত্র ৫০ লাখের কিছু বেশি জনসংখ্যার দেশ নিউজিল্যান্ডকে দীর্ঘদিন ধরেই চীনের বিষয়ে তুলনামূলক নমনীয় অবস্থান গ্রহণ এবং বাণিজ্যিক স্বার্থকে মিত্রদের নিরাপত্তা উদ্বেগের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
তবে চলতি মাসে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন সামরিক বাহিনী সংস্কারের এক বড় পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যার আওতায় ক্ষেপণাস্ত্র, সাইবার নিরাপত্তা ও ড্রোন প্রযুক্তিতে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, এখন নিউজিল্যান্ডের উচিত নিজের দায়িত্ব পালন করা।
চীন ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী জলসীমায় আগাম সতর্কতা ছাড়া লাইভ-ফায়ার মহড়া চালালে ওয়েলিংটন ও সিডনি উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোকে সতর্ক করা হয়।
বুধবারের এই চুক্তির একদিন আগেই জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোসের সঙ্গে বৈঠক শেষে নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও জোরদারের অঙ্গীকার করেন।
বর্তমানে ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন সপ্তাহব্যাপী যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে, যার লক্ষ্য একটি “সম্পূর্ণ যুদ্ধ পরিস্থিতি” অনুকরণ করা—চীনের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রতিহত করাই এর উদ্দেশ্য।
মহড়ার প্রথম সপ্তাহেই ফিলিপাইনের জলসীমার কাছাকাছি চীনের যুদ্ধজাহাজ, এমনকি বিমানবাহী রণতরী ‘শানডং’-কেও দেখা গেছে।