শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : কানাডার প্রতিষ্ঠান দ্য মেটালস কোম্পানি (টিএমসি) মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক পানিসীমায় গভীর সমুদ্রের খনিজ উত্তোলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে লাইসেন্সের আবেদন করেছে, যা এ ধরনের প্রথম আবেদন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ খাতের প্রতি ইতিবাচক নীতির ফলে এই পথ খুলে যায়।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক কেবল তৈরিতে ব্যবহৃত নিকেল ও কোবাল্ট সমৃদ্ধ গভীর সমুদ্রের ছোট ছোট পাথরসদৃশ নডিউলগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে পরিবেশবাদীরা এসব খনিজ উত্তোলনের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে আসছেন।
টিএমসি-র মার্কিন শাখা টিএমসি ইউএসএ এই লাইসেন্সের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করে। প্রস্তাবিত খনন এলাকা প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন অঞ্চলে, যার আয়তন ২৫,২০০ বর্গকিলোমিটার (৯,৭০০ বর্গমাইল)।
টিএমসি’র চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী জেরার্ড ব্যারন বলেন, ‘আজকের দিনটি শুধু টিএমসি ইউএসএ নয়, আমেরিকার খনিজ স্বনির্ভরতা ও শিল্প নবজাগরণের জন্যও একটি বড় অগ্রগতি।’
টিএমসি মার্চ মাসে জানায়, তারা প্রথম বাণিজ্যিক গভীর সমুদ্র খনিজ উত্তোলনের লাইসেন্স চাইতে যাচ্ছে। আইএসএ খনিজ উত্তোলনের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে ধীরগতি দেখানোর অজুহাতে তখন তারা আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ (আইএসএ)-এর কাছে আবেদন করার কথা বললেও হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নেয়।
‘বেপরোয়া ও বিপজ্জনক’
টিএমসি-র এই কৌশলগত মোড় নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে আন্তর্জাতিক পানিসীমাসহ খনিজ উত্তোলন অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করার নির্দেশ দেন।
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিপ সি কনজারভেশন কোয়ালিশন-এর এমা উইলসন এএফপিকে বলেন, ‘এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে, তারা একটি বেপরোয়া ও বিপজ্জনক খেলোয়াড়।’
‘আইএসএ-তে একটি স্থগিতাদেশই বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এই বার্তা দেবে যে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
যুক্তরাষ্ট্র যদিও আইএসএ’র সদস্য নয়, ১৯৮০ সালের একটি আইনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতলে বাণিজ্যিক খনিজ উত্তোলনের বিধান চালু করে, যার ওপর ভিত্তি করেই ট্রাম্প নির্বাহী আদেশটি জারি করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, এই খনিজ উত্তোলন শিল্প আগামী এক দশকে ১ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং দেশটির জিডিপি ৩০০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩২ লাখ কোটি টাকা) বাড়াবে। হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা আরও জানান, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকাই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য।
তবে বেইজিং ট্রাম্পের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং বৈশ্বিক স্বার্থের বিরুদ্ধে একটি আঘাত।
জাতিসংঘ সাগর আইন সনদ অনুযায়ী—যা আইএসএ গঠনের ভিত্তি, যদিও যুক্তরাষ্ট্র কখনো তা অনুসমর্থন করেনি, আন্তর্জাতিক সমুদ্রতলের খনিজ সম্পদকে মানবজাতির যৌথ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গ্রিনপিস-এর প্রচারক রুথ রামোস বলেন, ‘এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইন ও বৈজ্ঞানিক ঐকমত্যকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার নজির হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
পরিবেশবাদীদের মতে, গভীর সমুদ্র খনিজ উত্তোলন এমনসব বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, যেগুলোর সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানীদের জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত।