বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৪৪

নতুন জার্মান সরকার গঠনের পথ খুলে গেল ফ্রিডরিখ মেরৎসের

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : নতুন সরকার গঠনের পথে সবশেষ বাধাও অতিক্রম করলেন জার্মানির অপেক্ষমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎস। বুধবার কেন্দ্র-ডানপন্থী সিডিইউ/সিএসইউ-এর সঙ্গে এসপিডি জোট চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে তার পথ খুলে যায়।

বার্লিন থেকে এএফপি জানায়, ৬৯ বছর বয়সী মেরৎস আগামী মঙ্গলবার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন—যার মাধ্যমে বার্লিনের ছয় মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটবে এমন এক সময়ে যখন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। মেরৎসের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা সসমৃদ্ধ হলেও সরকার পরিচালনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।

সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের দলের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী মেরৎস ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির নেতৃত্বে আসছেন এমন এক সময়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ককে নাড়া দিয়েছেন এবং ইউরোপ রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।

সিডিইউ/সিএসইউ ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের এসপিডিকে চার বছরের জন্য জোটে আমন্ত্রণ জানায়। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, দ্বিতীয় স্থানে থাকা কট্টর ডানপন্থী আএফডির সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে না।

এসপিডির সদস্যরা এই জোট চুক্তি অনুমোদন করে ৮৪.৬ শতাংশ সমর্থন দিয়ে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এই ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

এসপিডির সহ-সভাপতি লার্স ক্লিংবেইলকে নতুন অর্থমন্ত্রী ও উপ-চ্যান্সেলর হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যা দলীয় নেতৃত্ব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছে।

মেরৎস সিডিইউর জোহান ভাডেফুলকে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং এসপিডির বরিস পিস্তোরিয়াস প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পদে বহাল থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এর আগে ৬ নভেম্বর শোলৎজের নেতৃত্বাধীন তিন দলীয় জোট ভেঙে পড়ে—সেই দিনই ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা

মেরৎসের জোট ২৮.৫ শতাংশ ভোট পায় এবং তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানির দীর্ঘদিনের অবহেলিত সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করবে এবং রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

তিনি অবকাঠামো উন্নয়ন ও টানা দুই বছর সংকুচিত হওয়া অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার অঙ্গীকার করেছেন—যদিও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জার্মান অর্থনীতি ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিদায়ী সংসদ শত শত বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের অনুমোদন এবং কঠোর ঋণনীতি শিথিল করায় মেরৎস তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক শক্তি নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার এক সিডিইউ দলের বৈঠকে মেরৎস বলেন, 'জার্মানি আবারও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণে প্রস্তুত।'

তিনি অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যা আএফডির উত্থানে সহায়ক হয়েছে এবং তাদের এবারের নির্বাচনে রেকর্ড ২০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করেছে।

আএফডি এখন কনজারভেটিভদের সঙ্গে প্রায় সমানে সমান অবস্থানে রয়েছে বা কোনো কোনো জরিপে এগিয়েও রয়েছে।

চ্যান্সেলর কার্যালয়ের সম্ভাব্য প্রধান থরস্টেন ফ্রাই ঘোষণা দিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে দমন অভিযান ৬ মে থেকে শুরু হবে।

তিনি ‘ফুনকে’ সংবাদপত্রকে বলেন, 'যারা অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশের চেষ্টা করবে, তারা ৬ মে থেকে সীমান্তেই প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে।'

এসপিডির সাধারণ সম্পাদক ম্যাথিয়াস মিয়ের্শ এই সদস্য ভোটের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এটি জাতীয় সরকারে যোগদানের পক্ষে “উল্লেখযোগ্য সমর্থন” নির্দেশ করে।

তবে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ ভিন্নমত পোষণ করে জানায়, কেবল ৫৪ শতাংশ এসপিডি সদস্য এই ভোটে অংশ নিয়েছে—যা তারা দলীয় নেতাদের জন্য এক ধরনের 'চড়' হিসেবে উল্লেখ করেছে।