শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ভয়াবহ বন্যা থেকে শুরু করে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ—জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ানক পরিণতির জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত নয় যুক্তরাজ্য।
বুধবার সরকারকে পরামর্শ দেওয়া বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছে।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, গত কয়েক বছরে ব্রিটেনে চরম আবহাওয়া বাড়ছে, এবং এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে দেশটি এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকে—ব্রিটেনের অভিযোজন অগ্রগতিবিষয়ক নতুন এক প্রতিবেদনে এমনটি বলেছে ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিটি।
কমিটির চেয়ার ও পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্য জুলিয়া কিং বলেন, ‘আমরা জানি সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। অথচ আমরা প্রস্তুত নই, এমনকি বহু ক্ষেত্রে প্রস্তুতির পরিকল্পনাও নিচ্ছি না।’
প্রতি দুই বছর অন্তর অভিযোজন অগ্রগতির মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা এই কমিটি বলেছে, গত বছর কনজারভেটিভদের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর লেবার পার্টি সরকার গঠন করলেও জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
গত বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যে বড় বড় ঝড় বয়ে গেছে, বন্যা ও তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
খরার কারণে বাড়ছে দাবানলের সংখ্যাও—২০২২ সালে এমন ৫০০টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্যে শীতকাল আরও উষ্ণ ও ভেজা হবে, যার ফলে বাড়বে ঘরবাড়ি, কৃষি ও অবকাঠামোতে বন্যার ঝুঁকি।’ এতে আরও জানানো হয়, ‘অক্টোবর ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত সময়টি ছিল ইংল্যান্ডে রেকর্ড করা সবচেয়ে ভেজা ১৮ মাসের সময়কাল।’
এছাড়া, ‘গ্রীষ্মকালে আরও শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরার মাত্রা বাড়াবে, সেই সঙ্গে পৃষ্ঠজলের বন্যার ঝুঁকিও বাড়াবে।’
কমিটি জানায়, যুক্তরাজ্যের সেরা মানের কৃষিজমির অর্ধেকের বেশি এবং রেল ও সড়ক অবকাঠামোর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এখন বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।
‘এটি আজকের সমস্যা’ -
ইংল্যান্ডে প্রায় ৬৩ লাখ বসতবাড়ি বন্যাপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত, যা ২০৫০ সালের মধ্যে বেড়ে ৮০ লাখে পৌঁছাতে পারে—অর্থাৎ প্রতি চারটি বাড়ির একটিই তখন ঝুঁকিতে পড়বে।
কমিটি সতর্ক করে বলেছে, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
জুলিয়া কিং সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বার্তা আরও স্পষ্ট করে বলা দরকার—আমরা আর দেরি করতে পারি না। এটি ভবিষ্যতের সমস্যা নয়, এটি আজকের সমস্যা।
এখন কিছু না করলে এটি ভবিষ্যতের দুর্যোগে পরিণত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠী। আমাদের হাসপাতাল, স্কুল বা কেয়ার হোমগুলো যথেষ্ট সহনশীল নয়।’
কমিটি মূল্যায়ন করা কোনো ক্ষেত্রেই—কৃষি, পানি সরবরাহ, পরিবহন বা ভবন নির্মাণ—‘ভালো’ মান অর্জন করেনি।
প্যানেল চারটি প্রধান সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উন্নয়ন, এবং সরকারি বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার।
গ্রিনপিসের সিনিয়র জলবায়ু সমন্বয়ক ফিল ইভান্স বলেন, ‘আমাদের খামারগুলো পানির নিচে, খাদ্যের দাম বাড়ছে, বাড়িঘর ধ্বংস হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ তার খেসারত দিচ্ছে।’ তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, ‘যুক্তরাজ্যের সহনশীলতা জোরদার করতে হবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ বলেছে, সরকারের অভিযোজন পরিকল্পনা ‘বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’ তারা একটি ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার’ দাবি জানিয়েছে, যা আমাদের ঘরবাড়ি ও সম্প্রদায়কে এখন এবং ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষা দিতে পারে।