শিরোনাম

ঢাকা, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) ‘এখনই পদক্ষেপ নিন, আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন’-এই স্লোগান নিয়ে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ শুরু হয়েছে।
আজ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে র্যালি, সংক্ষিপ্ত সমাবেশ, ডাক্তার ও রোগীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও সচেতনামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, এ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, দায়িত্বশীলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য সেবার ভবিষ্যৎ রক্ষায় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহের (১৮-২৪ নভেম্বর) আয়োজন করা হয়।
বিএমইউর মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইমিউনোলজি বিভাগের উদ্যোগে এবং পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ, শিশু বিভাগ, ফার্মাকোলজি বিভাগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় এ কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।
এই মহতী আয়োজনে ‘যখন চাই তখন নয়, চিকিৎসকের পরামর্শেই এন্টিবায়োটিক’ কথাগুলো জোরালেভাবে উচ্চারিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম।
বিএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার। আরও বক্তৃতা করেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, শিশু বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিয়ার রহমান, ডিন অধ্যাপক ডা. এম আবু হেনা চৌধুরী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মুরাদ সুলতান।
প্রধান অতিথি ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলমের বক্তব্যের সঙ্গে র্যালি এবং সমাবেশ শেষে সি ব্লকে ভাইস-চ্যান্সেলর এর নেতৃত্বে কর্মরত ডাক্তারদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয় এবং চর্মরোগ বিদ্যা বিভাগের ক্লাস রুমে চিকিৎসক ও ছাত্রদের নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, মানবদেহে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বে বহু মানুষ এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে মৃত্যুবরণ করছে।
তিনি বলেন, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলে রোগীর চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে। তাই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সকে এখনই মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য চিকিৎসককে ও রোগী উভয়কেই সচেতন হতে হবে। ফার্মিসিতে ওষুধ বিক্রেতাদেরকেও সচেতনতার আওতায় আনতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারণ ও রোগীর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক লিখলে তিনি কেন এন্টিবায়োটিক দিলেন সে কথা জিজ্ঞাসা করার অধিকার রোগীর আছে। ফার্মেসি থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না, এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স এর কারণে রোগীদেরকে দেয়া এন্টিবায়োটিক আর পূর্বের ন্যায় কাজ করে না। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ানক।
পোল্ট্রি মুরগী, গবাদি পুশুর মাধ্যমেও মানুষ এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স এর শিকার হচ্ছে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সঠিক মাত্রা, ডিউরেশন বা নির্ধারিত সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এটাও সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না।
সাধারণ জ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে যে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেটারও যৌক্তিকতা, প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা যাচাই, মনিটরিং এর ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়েই অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অভিযুক্ত হচ্ছে।
যেমন খুশি তেমন এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কারণে রোগীর যখন সংক্রমণ প্রতিরোধে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন তখন এন্টিবায়োটিক রোগীর দেহে কাজ করে না। এতে করে রোগীর ফুসফুস, কিডনীসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সের কারণে আইসিইউতে অনেক রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। এই অবস্থা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সকলকেই সচেতন হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মুরাদ সুলতান বলেন, সংক্রমন হলে এন্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হয়। তাই সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য হাত ধোয়া এবং মাস্ক পড়ার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সানজিদা সেতু, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা ইসলাম রুপা, শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেসমিন মোর্সেদ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মুরাদ সুলতান।