শিরোনাম
প্রতিবেদন : মাহ আলম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা যৌথভাবে এমন একটি তাত্ত্বিক মডেল তৈরি করেছেন যা অ্যালুমিনিয়াম-ভিত্তিক ন্যানোটিউব ব্যবহার করে অ-আক্রমণাত্মক ও সাশ্রয়ী বায়োসেন্সরের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্তে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।
‘অ্যালুমিনিয়াম-ডিরাইভ্ড ন্যানোটিউবস ফর লাং ক্যান্সার ডিটেক্শন: আ ডিটিএফ ইংকুইজিশন’ শিরোনামের গবেষণাপত্রটি চলতি ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে ন্যাচার পোর্টফোলিও’র আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে’ প্রকাশিত হয়।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন বুয়েটের আওলী উর রহমান। সহুগবেষক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ড. মো. কাবির উদ্দিন সিকদার, যুক্তরাষ্ট্রের রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (জচও)ুএর ডি. এম. সাদুজ্জামান, ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিুএর সৈয়দ মাহেদী হাসান এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাক্কির আমিন।
গবেষক দলটি দুটি অ্যালুমিনিয়ামুজাত ন্যানোটিউব, অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড ন্যানোটিউব (অষঘঘঞ) এবং অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ন্যানোটিউব (অষচঘঞ) ব্যবহার করে উচ্চ সংবেদনশীল ন্যানোসেন্সর তৈরির ওপর কাজ করেছে।
তারা কম্পিউটেশনালভাবে এই ন্যানোটিউবগুলো পরীক্ষা করেছেন ফুসফুসের ক্যান্সারের নিঃশ্বাসুজনিত তিনটি সাধারণ উদ্বায়ী জৈব যৌগ (ঠঙঈ নরড়সধৎশবৎ)—অ্যাসিট্যালডিহাইড, অ্যানিলিন ও আইসোপ্রিন—সনাক্তের জন্য।
উবহংরঃু ঋঁহপঃরড়হধষ ঞযবড়ৎু (উঋঞ) নামের একটি কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা বিশ্লেষণ করেন, ন্যানোটিউবগুলো কীভাবে এই বায়োমার্কার যৌগগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে।
গবেষণায় দেখা যায়, উভয় ন্যানোটিউবই যৌগগুলোকে তাপুনিঃসরণকারী রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শোষণ করতে পারে। তবে অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড ন্যানোটিউব গড়ে ২৬.৩০ থেকে ২৯.৬৬ শতাংশ বেশি শোষণক্ষমতা প্রদর্শন করে, যা একে জৈবুসেন্সর তৈরির ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর করে তোলে।
প্রধান গবেষক অলী উর রহমান বলেন, ‘অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড ন্যানোটিউব ফুসফুসের ক্যান্সার বায়োমার্কারগুলোর প্রতি অধিক সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে এবং এগুলো ভবিষ্যতে সাশ্রয়ী, অু-আক্রমণাত্মক সেন্সর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ক্যান্সারগুলোর একটি, যা প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায় এবং ৪০ লাখেরও বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
বর্তমান নির্ণয়ুপদ্ধতি যেমন সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পিইটি স্ক্যান ও টিস্যু বায়োপসি ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং কখনো কখনো ঝুঁকিপূর্ণও, কারণ এগুলো বিকিরণ এবং মিথ্যা পজিটিভের ঝুঁকি বহন করে।
গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়েছে নিঃশ্বাস বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্তকরণের এক নতুন পদ্ধতি, যা দ্রুত, সহজ ও অুআক্রমণাত্মক। মানুষের নিঃশ্বাসে থাকা উদ্বায়ী জৈব যৌগগুলো শরীরের বিপাকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে, আর উন্নত ন্যানোসেন্সর এগুলো শনাক্ত করে ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করতে পারে।
গবেষকরা ন্যানোটিউবগুলোর গঠনগত, তাপগত, ইলেকট্রনিক ও আলোকীয় বৈশিষ্ট্যের বিশদ বিশ্লেষণ করেন। তাতে দেখা যায়, অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড ন্যানোটিউব অধিক স্থিতিশীল, বিক্রিয়াশীল এবং বায়োমার্কারের উপস্থিতিতে বেশি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক সংকেত উৎপন্ন করতে সক্ষম।
সহুগবেষক প্রফেসর ড. মো. কাবির উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘গঠনগত, বৈদ্যুতিক, তাপগত ও আলোক-বিশ্লেষণ প্রমাণ করে যে অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড ন্যানোটিউব ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্তে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ন্যানোটিউবের তুলনায় অধিক নির্ভরযোগ্য।’
তিনি আরও বলেন, এই গবেষণার ফল ভবিষ্যতে মানুষের নিঃশ্বাস থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সনাক্তে ব্যবহারযোগ্য ন্যানোসেন্সর তৈরিতে দিকনির্দেশনা দিতে পারে, যা ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে হাজারো প্রাণ বাঁচাতে সহায়ক হবে।
প্রফেসর কাবির সরকার, দাতব্য সংস্থা ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান এই মডেলটির ক্লিনিক্যাল উন্নয়ন ও বাস্তব প্রয়োগে সহযোগিতার জন্য।