বাসস
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫০

জাতীয় দলের জার্সিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নে এগিয়ে যাচ্ছেন উদীয়মান ক্রিকেটার রবিন

নারায়ণগঞ্জ, ২ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : বয়সভিত্তিক দলে নিজেকে আগেই প্রমান করেছেন, এখন স্বপ্ন জাতীয় দলের জার্সিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। আর সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন নারায়নগঞ্জের তরুণ ক্রিকেটার মাহফুজুল ইসলাম রবিন।

রবিন নারায়ণগঞ্জর সদর উপজেলার মুসলিম পাড়া এলাকায় জন্মগ্রহন করেন। বাবা নুরুল ইসলাম ও মা রহিমা বেগমের এর ছোট সন্তান। বাবার মৃত্যুর পর বড় বোন পপি ও মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন রবিন। প্রাথমিক শেষে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুলের যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু এর এক বছরের মধ্যেই নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রথম সিড়িতে পদাপর্ন করেন রবিন। তিনি বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন রবিন।

মাত্র দুই বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন রবিন। বাবার আদর না পেলেও মায়ের ছায়াতলেই বড় হয়েছেন তিনি। মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে ভালো চাকরি করবে, কিন্তু রবিনের মন তো ছিল ক্রিকেটে। মায়ের নিষেধ থাকলেও পেয়েছেন বোনের সার্বিক সমর্থন, যা তাকে ক্রিকেটার হওয়ার সাহস যুগিয়েছে। বোনের সহযোগিতায় শুরু করেছিলেন, এখন তারই ধারাবাহিকতায় দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেন রবিন।

নিজেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত একজন সফল ওপেনার হিসেবে দেখতে চান রবিন। খেলার মাঠে গিয়ে রবিন হয়ে উঠেন নির্ভয়। খেলার মাঠে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতেই পছন্দ করেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( বিকেএসপি) থেকে শুরু হয় রবিনের যাত্রা। ২০২২ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে  বিশ্বকাপ খেলেছেন এই ডানহাতি খেলোয়ার। বর্তমানে ইমার্জিং ক্রিকেটার হিসেবেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল), ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টে নিয়মিত খেলে থাকেন। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে খেলেছেন। সেখানে ১১ ম্যাচে ৫১২ রান করে সকলের নজড়ে পড়েছেন।

তবে কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতি মোটেই অনুকূলে ছিলনা। রবিনের ছেলেবেলা এতোটা মসৃন ছিলনা। ছোটবেলায় মায়ের অনুমতি না পেলেও এখন তার স্বপ্নই তার মায়ের স্বপ্ন। একটা সময়ে মায়ের বারণ স্বত্তেও দিনের প্রথম প্রহরেই ছুটে যেতেন খেলার মাঠে।

বাসস’র সাথে একান্ত আলাপকালে প্রতিভাবান এই খেলোয়ার রবিন জানান তার ক্রিকেটার হয়ে উঠার গল্প। 

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে রবিন বলেন, আমার ক্রিকেট খেলতে ভালো লাগত, কিন্তু আম্মু চাইতো আমি পড়ালেখায় মনোযোগী হই। আম্মু ছোটবেলায় অনেক রাগও করতেন। যদিও আপু সবসময়ই আমাকে সহযোগিতা করেছে। পরবর্তীতে আমার বন্ধু নাইম নারায়ণগঞ্জের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমীতে ভর্তিতে সহায়তা করে। আমাকেও একদিন বলে সেখানে আসার জন্য। আমি বাসায় না জানিয়েই সেখানে যাই। 

সেখানে গিয়ে ক্রিকেটের প্রতি টান আরও বেড়ে যায়। পরে টিফিনের টাকা জমিয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছিলাম।  

কয়েকমাস মাকে না জানিয়ে সেখানে ক্রিকেট অনুশীলন করেছিলাম। অনুশীলন করতে গিয়ে একদিন পায়ে ব্যাথা পাই, সেদিন আম্মু বুঝতে পারে। সেদিন আপুই আমাকে সামনে এগিয়ে যাবার সাহস যুগিয়েছে।

রবিনের ক্রিকেট জীবনের ভরসাস্থল,  তার বোন পপি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ভাইয়ের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবদান রেখেছেন তিনি। রবিন বলেন,  আপু আছে বলেই আমি আজকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পেরেছি। কারণ আপু যদি ছোটবেলায় মাকে রাজি না করাতেন, আমাকে সার্বিক সহায়তা না করতেন, তাহলে এই পর্যন্ত আসা সম্ভব হতো না।

রবিনের বোন পপি বলেন, বাচ্চাদের তো অনেক ধরনের খেলনা নিয়ে আগ্রহ থাকে। রবিনের আগ্রহ ছিল ক্রিকেট ব্যাট আর বল নিয়ে। ২০ টাকা দামের প্লাস্টিকের ব্যাট-বল ছিল ওর প্রিয়। আমাকে বলতো বল করতে, আর ও ব্যাট নিয়ে খেলত। এতটাই পছন্দ ছিল যে, রাতে ঘুমানোর সময় ব্যাট বল সাথে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকতো। প্রথমে বাসায় কেউ রাজি ছিল না, কিন্তু যার সকল ধ্যান-জ্ঞান ছিল ক্রিকেটে, এমন মানুষকে তো আর থামিয়ে রাখা যায়না। আমার ভাই এখন ক্রিকেটের জগতে যতটুকু এগিয়েছে, সেটা আল্লাহর রহমত।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে নিজের অবস্থান  তৈরী করে রবিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের জন্য অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।