রাঙ্গামাটি, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সফলতার ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের একটি সুনাম রয়েছে। পাহাড়ে খেলাধুলার পাশাপাশি অনেকে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেয়ে দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। 

এক সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গন থেকে উঠে আসা জাতীয় ফুটবল দলে মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড়দের মধ্যে  অরুণ দেওয়ান, বরুণ দেওয়ান ছিলেন উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সময়ে মিতুল, নারী ফুটবলে ঋতুপর্না, রুপনা কিংবা বক্সিংয়ে সুর কৃঞ্চ চাকমা- দেশের ক্রীড়াঙ্গণে আলো ছড়াচ্ছে রাঙ্গামাটির এই কৃতি সন্ত্নারা।

সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং পাহাড়ের দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে রাঙ্গামাটিতে তৈরী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) আঞ্চলিক শাখা।

রাঙ্গামাটির ১০৪ নং ঝগড়াবিল এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া এলাকায় বিকেএসপির এই আঞ্চলিক শাখা স্থাপন করতে জায়গা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, বিকেএসপি মহাপরিচালকসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা নির্ধারিত জমি পরিদর্শন করেছেন বলে বাসসকে নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ মারুফ।

তিনি বাসসকে বলেন, রাঙ্গামাটি শহরে বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বিকেএসপির আঞ্চলিক শাখা স্থাপনের খবরে  রাঙ্গামাটি শহরের সাধারণ মানুষ ও ক্রীড়াবিদরা অত্যন্ত আনন্দিত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে বিকেএসপির এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন কাজ শুরু হয় সেজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাঙ্গামাটির সকল ক্রীড়াপ্রেমী জনগণ। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে রাঙ্গামাটি পার্বত্য এলাকা থেকে আরো ভালো মানের খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে।

দেশের সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য বরুণ দেওয়ান বাসসকে বলেছেন, পাহাড়ের  খেলোয়াড়দের উন্নয়নে রাঙ্গামাটিতে বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। একসময় আমরা যারা ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম তাদের অনেক প্রতিকুল পরিবেশ পাড়ি দিয়ে খেলাধুলা করতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এক সময়  রাঙ্গামাটিতে বৃহৎ আকারে ছিলনা কোন প্রশিক্ষন কেন্দ্র। কোন প্রকার সুযোগ না থাকা সত্বেও  পার্বত্য জেলাগুলো থেকে উঠে এসেছে অনেক  কৃতি খেলোয়াড়। তারা সকলেই দেশ ও দেশের বাইরে ক্রীড়াক্ষেত্রে ছড়িয়েছে আশার আলো। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধার অভাবে হারিয়ে গেছে পাহাড়ের অনেক কৃতি খেলোয়াড়।

বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রাঙ্গামাটি সদরে স্থাপিত হলে নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসার পাশাপাশি সকল প্রতিকুলতা দুর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
  
রাঙ্গামাটি ১০৪ নং ঝগড়া বিল মৌজার হেডম্যান সুরঞ্জন দেওয়ান বাসসকে বলেন, রাঙ্গামাটির ১০৪ নং ঝগড়াবিল এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া এলাকায় বিকেএসপির অঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে জায়গা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি শহরের কাছাকাছি বিকেএসপির এই আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে জেলার ১০টি উপজেলার মানুষের জন্য অনেক সুবিধা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিকেএসপি মহা পরিচালক জমি পরিদর্শন করেছেন ও মনোনীত জায়গায় বিকেএসপির আঞ্চলিক শাখা স্থাপনার জায়গা নির্ধারনের কাজ চলছে। হ্রদ আর পাহাড়ের মনোরম সৌন্দর্য্যরে মাঝে রাঙ্গামাটির ১০৪নং ঝগড়াবিল এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় এই জায়গা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এতে খুশি স্থানীয় জমির মালিকরা। তারা সকলেই বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য সেচ্ছায় জমি দিয়ে এমন মহৎ উদ্যোগের স্বাক্ষী হতে চায় বলে জানান হেডম্যান সুরঞ্জন দেওয়ান।

পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া খেলোয়াড়দের সুযোগ সৃষ্টিতে রাঙ্গামাটিতে এই আঞ্চলিক শাখা নির্মাণে খুশি এখানকার উঠতি খেলোয়াড়রা। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকায় শহরের তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় বিকেএসপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরী হলে রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলা খেলোয়াড়রা  প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হতে পারবে সহজে। 

পুরণ হবে শত শত কিশোর কিশোরীর খেলোয়াড় হবার স্বপ্ন।

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাও এই দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করেছেন। তাদের মতে, এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে এবং আশা করা যায় দ্রুতই শহরের তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হবে।